বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রচণ্ড শীত দেখিয়ে অনুপস্থিত খালেদা, বিরক্ত আদালত

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৫:০৯

আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘বয়স, প্রচণ্ড শীত করোনারও ঝুঁকির কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতে হাজির হতে পারেন নাই।’ বিচারক বলেন, ‘আপনারা বারবার সময়ের আবেদন করে সময় নিচ্ছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে আসতে পারছেন না । অথচ আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।’

ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলিসিয়াস হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে যাননি প্রচণ্ড শীতের কারণ দেখিয়ে। পাশাপাশি করোনা-ঝুঁকির কথা বলে তার আইনজীবীরা নতুন আবেদন করলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিচারক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ডের তিন বছর পূর্তির দিন সোমবার নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বিএনপি নেত্রীর আদালতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

কিন্তু তার আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করলে বিচারক বলেছেন, এবারই শেষবারের মতো সময় দিয়েছেন তিনি।

কেরানীগঞ্জের কারা ভবনে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এই শুনানি হয়।

শুনানিতে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘বয়স, প্রচণ্ড শীত করোনার ও ঝুঁকির কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতে হাজির হতে পারেন নাই।’

বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা প্রচণ্ড শীতের কথা বললেও আজ ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এক সপ্তাহ আগেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিবেচনায় করোনার সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়। দেশে ২১ দিন ধরে শনাক্তের সংখ্যা টানা ৫ শতাংশের নিচে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানবিক কারণে বিজ্ঞ আদালতের কাছে একটি শর্ট (নিকটবর্তী তারিখ) ডেট প্রার্থনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আদালতকে বলেছি, একটি ছোট করে তারিখ দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই এই মামলার শুনানি করতে চাই।’

আবেদন শুনে বিচারক বলেন, ‘আপনারা বারবার সময়ের আবেদন করে সময় নিচ্ছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে আসতে পারছেন না। অথচ আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।’

তখন মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘আগামী তারিখে আমরা বিজ্ঞ আদালতে ওনার উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’

বিচারক বলেন, ‘এই শেষবারের মতো সময়ের আবেদন গ্রহণ করা হলো।’

এরপর আদালত আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ রাখেন।

তিন বছর আগে আজকের এই দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যান বিএনপি নেত্রী। পরে হাইকোর্ট সাজা পাল্টে ১০ বছর করে। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাতে তার দণ্ড হয় সাত বছরের।

এই দুটি মামলায় বিচারিক আদালত ও উচ্চ আদালতে শুনানি চলাকালে নাইকো দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে একাধিক নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি যাননি। পরে আদালতই বসে কারাগারে।

এক বছর আগে খালেদা জিয়া সাময়িক মুক্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার পরেও এই মামলায় তিনি আদালতে যাননি। ১ ফেব্রুয়ারি বিচারক নির্দেশ দেন বিএনপি নেত্রীকে ৮ ফেব্রুয়ারি স্বশরীরে হাজির থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ১৭ বছরের কারাদণ্ড স্থগিতের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া

গত বছরের ২৫ মার্চ বিশেষ বিবেচনায় দুই দণ্ড স্থগিত হয় প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে। উচ্চ আদালতে বিএনপির সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তার স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে যান। শেখ হাসিনা তাতে সাড়া দিলে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। পরে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয় মুক্তির মেয়াদ।

নাইকো দুর্নীতি মামলায় যে অভিযোগ

কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন।

২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এএইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ৷

এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

খালেদার সাজা হওয়া দুই মামলা কোন পর্যায়ে

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে সাজা হওয়ার পর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে।

হাইকোর্ট রায় দেয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই ১৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু আবেদনের ওপর শুনানি হয়নি আর।

খালেদা জিয়ার সাজার তিন বছর পূর্তির দিন রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ

একই বছরের ৩০ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণা হয়। এই মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাজা হয় সাত বছরের।

এই রায়ের পরও খালেদা জিয়ার আপিল হাইকোর্ট গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল।

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাত মাসে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তি হলেও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় প্রায় ২০ মাসেও আপিল শুনানি শুরুই হয়নি।

বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা এই দুই মামলার শুনানিতে কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) তো এখন সরকারের সিদ্ধান্তে প্যারোলে কারামুক্ত হয়ে আছেন। এ সময় তার মামলা নিয়ে আমরা কোনো চিন্তা করছি না।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এসব হয়েছে, এখন রাজনৈতিক ইচ্ছা ছাড়া কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক না, এটা আমার ব্যক্তিগত মত।’

এ বিভাগের আরো খবর