পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মাদক মামলার এক আসামির হদিস না পাওয়া নিয়ে পরিবার ও পুলিশের ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
মো. রায়হান নামের ওই যুবককে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ধরা পড়ার ভয়ে আত্মগোপনে আছেন যুবক।
রায়হানের বাড়ি কুয়াকাটার মহিপুর গ্রামে। তার বাবা আবুল কাশেম মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ি তালতলীর দিকে যাচ্ছিলেন রায়হান। সন্ধ্যায় খোঁজ নিতে তার (রায়হান) স্ত্রী ফোন করলে মোবাইলের অপর প্রান্তে ধস্তাধস্তির আওয়াজ শোনা যায়।
কাশেম বলেন, ফোনের পরপরই তারা রায়হানকে খুঁজতে বের হন। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন স্থানীয় এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও দেখে রায়হানকে শনাক্ত করেন তিনি। ঘটনার দুইটি ভিডিওতে দেখা যায়, এলাকার কয়েকজন যুবক রায়হানকে মারধর করছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় রায়হানকে মারধর করার এই দৃশ্য
সেদিনই মহিপুর থানায় রায়হানকে অপহরণ ও নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেন কাশেম। অভিযোগ করা হয় এলাকার ইমাম সিকদার, মসিউর, ইমরান, বিপ্লব শীলসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে।
কিন্তু মামলার পরদিন রায়হানকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে কাশেমকে জানান ইমাম।
এ নিয়ে কাশেম বলেন, ‘ইমাম সিকদার আমারে ফোন কইরা হুমকি দিয়া বলছে, “আপনার ছেলেরে আমরা ছেড়ে দিছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরও খারাপ হবে।’”
এখনও রায়হানের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে দাবি কাশেমের।
কী আছে ভিডিও ক্লিপগুলোতে
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচ যুবক সাদা গেঞ্জি পরা রায়হানকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে। এ সময় রায়হানকে বলতে শোনা গেছে, ‘আর ভুল হবে না ভাই, মাফ করে দেন।’
এর পরের ভিডিওতে দেখা গেছে রায়হানের গেঞ্জি খুলে ফেলা হয়েছে; বাঁধা হাতও খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে রায়হান ও নির্যাতনকারীরা একসঙ্গে বসে মাদক সেবন করছে। এরপর আবার দেখা যায় রায়হানকে হাত-পা বেঁধে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ভিডিওর পাশাপাশি রায়হানের অচেতন অবস্থার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, রায়হানকে রোববারও তার শ্বশুরবাড়ি তালতলী এলাকায় সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন স্থানীয় লোকজন।
তিনি বলেন, রায়হানকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ইমাম সিকদারের বিরুদ্ধে মহিপুরসহ বিভিন্ন থানায় মাদকের সাতটি মামলা আছে। রায়হানের নামেও আছে পাঁচটি মামলা। ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তারা অনেক দিন ধরেই পলাতক।
মনিরুজ্জামানের ধারণা, ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এখন ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রায়হান। তাকে ও নির্যাতনকারীদের খুঁজে বের করতে মাঠে আছে পুলিশের একটি দল। তাদের পাওয়া গেলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।