করোনার গণটিকা শুরুর প্রথম দিন সারা দেশে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে জেলাওয়ারি সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আর সবচেয়ে কম দেয়া হয়েছে বরগুনায়।
ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন মোট পাঁচ হাজার ৭১ জন। আর বরগুনায় নিয়েছেন ৭৮ জন।
এই টিকা দেশে আসার পর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা অপপ্রচার চলছিল, তার কোনো নমুনাই দেখা যায়নি।
৩১ হাজার মানুষের মধ্যে ২১ জনের সামান্য জ্বর, টিকাদান স্থানে হালকা ব্যথা ও লাল হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাকিরা পুরোপুরি স্বাভাবিক আছেন।
শতকরা হিসাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.০৬৭ শতাংশ। যা যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই এক স্বাভাবিক চিত্র।
বাংলাদেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। ১০ দিন পর সারা দেশের এক হাজার পাঁচটি টিকাদান কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেয়া শুরু হয়।
প্রথম দিন তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধান বিচারপতি, আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা টিকা নেন।
টিকা নিচ্ছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে ৩১ হাজার ১৬০ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, তেমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি কারও। কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে-এমন তথ্য এসেছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকা দেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সবাইকে ৩০ মিনিট হাসপাতালে রাখা হয়। আর তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান উদ্বোধন করার পর ২৬ জন ও পরদিন যে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়, তাদের মধ্যেও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
গণটিকায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি কী হয়, সেদিকে দৃষ্টি ছিল মানুষের।
ভারত থেকে এই টিকা আসার পর থেকেই বিএনপি এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, এই টিকা দিলে মানুষ মারা যাবে। তিনি এমনও বলেন, সরকার টিকা দিয়ে বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
টিকা নিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
তার এই বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে বিএনপির সমর্থকরা ব্যাপকভাবে টিকাবিরোধী প্রচার চালিয়েছেন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োগের জন্য সারা দেশে ৬০ লাখ টিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। আরও ১০ লাখ টিকা হাতে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে। টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ৩১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের মধ্যে টিকা নিয়েছে পাঁচ হাজার ৭১ জন।
এই বিভাগে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ২১ জন আর নারী দুই হাজার ২৯৩ জন।
এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এদের সাত জন রাজধানী ঢাকার।
চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ছয় হাজার ৪৪৩ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৯৪৪ ও নারী এক হাজার ৪৯৯ জন।
এদের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন তিন হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৯০৯ ও নারী ৮৪৮ জন।
এদের মধ্যে চার জনের শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
খুলনা বিভাগে তিন হাজার ২৩৩ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৪৬৩ জন পুরুষ, নারী ৭৭০ জন।
এই বিভাগে একজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বরিশাল বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে এক হাজার ৪১২ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ১২৩, নারী ২৮৯।
এই বিভাগে কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩৯৬ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৭৪৭, নারী ৬৪৯।
এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এক জনের শরীরে।
ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় এক হাজার ৯৯৩ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৩৭২ ও নারী ৩২১ জন।
এই বিভাগে কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
রংপুর বিভাগে টিকা নিয়েছেন দুই হাজার ৯১২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ২৭৮ ও নারী ৬৩৪ জন।
এই বিভাগেও কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।