বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণটিকা: আগে দিলেন ভিআইপিরাই

  •    
  • ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:৩৫

পরিকল্পনা ছিল উল্টো। স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফেসবুকে এই টিকা নিয়ে নানা অপপ্রচার, রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপির নানা নেতিবাচক বক্তব্যের পর আগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিরাই টিকা নিলেন।

করোনার গণটিকা প্রয়োগের প্রথম দিন টিকা নিলেন একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী।

প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও টিকা নিলেন প্রথম দিন।

ঢাকার বাইরে সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও টিকা নিলেন শুরুতে।

পরিকল্পনা ছিল উল্টো। স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফেসবুকে এই টিকা নিয়ে নানা অপপ্রচার, রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপির নানা নেতিবাচক বক্তব্যের পর আগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিরাই টিকা নিলেন।

গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দুই দিনে টিকা দেয়া হয় ৫৭৭ জনকে।

এই টিকা দেশে আনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারত থেকে আনা টিকা নিরাপদ নয়। এই টিকা দিয়ে মানুষ মারা যাবে- এমন কথাও বলা হয়। টিকা দিয়ে সরকার বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়- এমন বক্তব্যও দেন দলটির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী।

দলটির এমন বক্তব্যের পর তাদের সমর্থক ও অনুসারীরা ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার চালান। তাদের দাবি, এই টিকা নিরাপদ নয় বলে ভিআইপিদের আগে না দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর পরীক্ষা করতে চায় সরকার।

তবে সরকারের অগ্রাধিকারের ঘোষণায় কোনো পরিবর্তন ছিল না। আগে থেকেই জানানো হয় স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের অত্যাবশ্যকীয় কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন।

রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।

এরপর রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে টিকা নেন তিনি।

টিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘টিকা নিয়ে আমি শক্তিশালী হয়েছি। এই টিকা অনেক নিরাপদ। এ পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। আমিও সুস্থ ও স্বাভাবিক আছি।’

মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন টিকা নিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি বলেন, ‘আমি টিকা নিয়েছি। কোনো অসুবিধা হয়নি। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের ৪০ বিচারপতিও টিকা নিয়েছেন। সুতরাং দেশবাসীকে বলব, সবাই যেন দ্রুত নিবন্ধন করেন।’

বেলা সাড়ে ১১টায় একই হাসপাতালে টিকা নেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এখানেই মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। পরে নেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

টিকা নিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে টিকা নেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

দুপুরে সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা নেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট টিকা নেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

টিকা নিয়েছেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও।

টিকা নিচ্ছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

সকালে বিচারপতি জিন্নাতারা হক ও বিচারপতি এনায়েতুর রহিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে টিকা নেন। এই হাসপাতালেই টিকা নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক এই নেতা বলেন, ‘টিকা নেন সবাই। কোনো ভয় নেই। সবাইকে বলব এটা আপনার অধিকার। টিকা নেয়ার জন্য যার যেদিন সময় হবে নিয়ে নেবেন।’

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নিয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এখানে টিকা নেন সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ বেশ কয়েকজন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন এখানেই টিকা নেন।

রাজারবাগে টিকা নিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

টিকা নিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম

দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা টিকা নেন।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিদেশে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করা লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ২০০ জন সেনা সদস্য নিয়েছেন করোনার টিকা।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হক মিয়া, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক জোবায়দা নাসরীনসহ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শীর্ষ ১১ জন কর্মকর্তা টিকা নিয়েছেন আগারগাঁওয়ের নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে।

ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় কাজ করা বাহিনী এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এমডি মজিবুর রহমানও টিকা নিয়েছেন এখানেই।

গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে ঢাকার ৫০টি হাসপাতালে ৫০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। মোট ২০৪টি দল ঢাকার টিকাদান পরিচালনা করছে।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার ৯৫৫টি হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে টিকা দেয়া হয়। এতে দুই হাজার ১৯৬টি দল কাজ করে।

টিকা নিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

প্রয়োগের জন্য সরকারের হাতে আছে ৭০ লাখ টিকা। এর মধ্যে ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশ কিনেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। আর ২০ লাখ উপহার হিসেবে দিয়েছে দেশটি। ১০ লাখ টিকা এখনও কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের হাতে রাখা হয়েছে জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য।

প্রথমে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে অধিদপ্তর। এখন ৩৫ লাখ টিকা প্রথমে দেয়া হবে।

টিকা নিতে নিবন্ধনের পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়া টিকা নয়- এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে হাতে হাতেও করা যাবে নিবন্ধন। আবার স্বাস্থ্যকর্মীরাও যাবেন বাড়ি বাড়ি।

এ বিভাগের আরো খবর