একটা সময় ছিল একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম ছিল চিঠি। জরুরি কিছু হলে টেলিগ্রাম। ডিজিটাল যুগে এসে হারিয়ে গেছে সেই চিঠি। মানুষ ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোসহ নানা মাধ্যমেই এখন যোগাযোগ করছে।
কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সেই যোগাযোগের মাধ্যম ‘চিঠি’কে পুনরুজ্জীবিত করতে ভিন্ন রকম এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বরিশাল নগরীর ‘ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা’ নামের একটি সংগঠনের ১০ জন সদস্য। আসন্ন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তারা তৈরি করেছেন একটি লেটার বক্স বা চিঠির বাক্স। প্রিয়জনকে উদ্দেশ করে চিঠি লিখে ফেলতে হবে ওই চিঠির বাক্সে। লেখা অনুযায়ী দেয়া হবে পুরস্কার।
এই চিঠির বাক্স তৈরির উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তাদের একজন হচ্ছেন মিগ বিশ্বাস।
শনিবার দুপুরে কথা হয় মিগ বিশ্বাসের সঙ্গে তার মালিকানাধীন ‘চা ঘর’ নামে চায়ের দোকানে। ডিসির লেক লেনে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি বরিশালের গলিতে ঢোকার মুখেই এই চায়ের দোকান। দোকানটিতে ঢুকতেই দেখা যায় রং দিয়ে লেখা ‘গড লাভস ইউ’। এই দোকানের সামনেই রাখা হয়েছে চিঠির বাক্সটি।
মিগ বিশ্বাস বলেন, ‘'চিঠির যে যুগটা আছিলো হেডা কত সুন্দর কত মধুর আছিলো! বাবার কাছে টাহা চাইতে হইলে চিঠি, পরিবারের খোজ খবর নেতে চিঠি বা প্রেম নিবেদন করতেও যে চিঠির ব্যবহার হইতো সেই চিঠি এখন কালের বিবর্তনে হারাইয়া গ্যাছে। আমরা এহন অনেক ব্যস্ত হইয়া পরছি। চিঠি লেহার সময়ই নেই। আমরা ভুইলাই গেছি এখন চিঠি লেহাটা। এত আপডেট হইয়া গেছি যে আমাদের অতীতকেই মনে রাখতে পারিনাই। সেই দিক বিবেচনা কইরাই এই চিঠির বাক্স তৈরির উদ্যোগ নিছি মোরা। যেহানে মানুষ নিজের প্রিয়জনকে উদ্দেশ্য কইরা চিঠি লেখবে।
মিগ বিশ্বাস আরও বলেন, ‘কেউ যদি নিজের নাম পরকাশ করতে না চায় তাইলে সেভাবেও সে চিঠি লেখতে পারবে। চিঠি লেহার চর্চা বাড়ানোর জন্য এবং নতুন প্রজন্মকে চিঠি লেহায় আকৃষ্ট করার লইজ্ঞাই এই উদ্যোগ লইছি আমরা। ১০ দিন হইছে এহানে অর্থাৎ আমার দোহানের সামনে চিঠির বাক্স রাখা হইছে। ৮/১০টি চিঠি পড়ছে। আমার দোহানের কাস্টমারসহ অনেকেই চিঠির বাক্সর বিষয়টা জিগান আমার ধারে। ভালোবাসা দিবসের আগের দিন আমরা এই বাক্সটি খুলমু। যার চিঠি যত সুন্দর হইবে তারে পুরষ্কার দিমু আমরা।’
মিগ বিশ্বাসের চায়ের দোকানের কাস্টমার ব্যবসায়ী সজীবুল ইসলাম বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে চিঠি। আমার মনে হয় এখনকার যারা স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, তাদের চিঠি লিখতে দিলে ঠিকমতো লিখতে পারবে না। কিন্তু আমাদের সময় তো যোগাযোগের মাধ্যমই ছিল চিঠি। চিঠি লেখার বিষয়টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা অতুলনীয়।’
কথা হয় বরিশালের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা অতুল চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে কলেজ লাইফে প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম চিঠির মাধ্যমে। চিঠিতে যা লেখা যেত তা কিন্তু মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে লেখা যায় না। মনের ভাব প্রকাশের একটা অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। মিগ বিশ্বাসসহ যারা চিঠির বাক্স তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে তাদের সাধুবাদ জানাই।
পিন্টু বিশ্বাস নামে বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা চিঠি লেখা ভুলে গেছি। চিঠিকে আবার মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনতে মিগ বিশ্বাসের উদ্যোগটা অন্য রকম বলা যায় এবং এটা অনেককে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমার ধারণা। আমি চাই শুধু ভালোবাসা দিবস নয়, অন্য যেকোনো ইভেন্টেও এই আয়োজনটা করা হোক।