তিন বছর আগে পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্য একটি মামলায় আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিন বছর ধরেই নানা তারিখ পড়েছে এই মামলায়। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী যাননি আদালতে। এবার বিচারক দিয়েছেন কড়া নির্দেশ। স্বশরীরে হাজির থাকতেই হবে।
তিনি কি আদালতের আদেশ মেনে যাবেন?
বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী বলেছেন, এখনো নিশ্চিত নয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার দিনই খালেদা জিয়াকে নেয়া হয় পুরান ঢাকায় সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এই মামলায় বন্দি থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। তিনি এই মামলাতে যখন আদালতে যাচ্ছিলেন না, তখন আদালত বসানো হয় কারাগারের ভেতরে। সেখানেই হয় রায়। এবার সাত বছরের দণ্ড পান বিএনপি নেত্রী। আগের মামলায় হাইকোর্টে আপিল করার পর সাজা মওকুফের বদলে হয় দ্বিগুণ।
১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বন্দি খালেদা জিয়াকে সে সময় নাইকো দুর্নীতির মামলায় হাজির হতে একাধিকবার আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি হাজির হননি। পরে এই মামলার বিচারেও আদালত বসে কারাগারের ভেতরে।
এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত হলে মুক্তি মেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। পরে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয় মাস।
এর মধ্যে নাইকো দুর্নীতির মামলায় শুনানিতে বিএনপি নেত্রীর পক্ষে বারবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন তার আইনজীবীরা। গত ১ ফেব্রুয়ারির শুনানিতেও এমনটিই হয়েছে।
সেদিন কেরানীগঞ্জের কারাভবনে নির্মিত ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান আদেশ দেন, পরবর্তী দিবসে যেন খালেদা জিয়া অবশ্যই উপস্থিত থাকেন।
বিএনপি নেত্রী কি তবে তার সাজা ঘোষণার তিন বছর পূর্তির দিন আবার আদালতে যাচ্ছেন?
জানতে চাইলে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারও সময়ের আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আরও একটি আবেদন জমা দেয়ার হয়েছে।’
তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়া আদালত হাজির হচ্ছেন না?
এমন প্রশ্নে মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘এখনো আসলে ঠিক বলা যাচ্ছে না।’
যেদিন বিএনপি নেত্রীকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে, সেদিন অবশ্য তার দল ডেকেছে বিক্ষোভ। দুর্নীতির মামলায় সাজা দেয়ার প্রতিবাদে দেশের সব মহানগর ও জেলায় জেলায় সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ কারাগার থেকে বের হন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আজ তার বন্দিত্বের জন্য সারা জাতি বেদনায় ভারাক্রান্ত। এই ঘোর তিমিরঘন পরিবেশের অবসান ঘটবেই, আওয়ামী লাঠিপেটা গণতন্ত্রের কবর রচনা হবেই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেই।'
মামলায় কী অভিযোগ?
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে সেনা-সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এএইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ৷
এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে বিএনপির আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পর উদ্যোগী হয় তার পরিবার। ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয় দণ্ড।
এরপর গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ছয় মাস শেষ হওয়ার আগেই মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। সাময়িক মুক্তিতে এখন তিনি গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।