স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের বাড়ি একই গ্রামে। গ্রামের নাম চানপুর। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার এই জনপদে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে তাদের মধ্যে চলছিল দ্বন্দ্ব।
এরই জেরে শনিবার ঘটছে তুলকালাম ঘটনা। হামলা চালানো হয়েছে স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে। সেখানে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) লাঞ্ছিত করেছে দুর্বৃত্তরা। তাকে ফেলে দেয়া হয়েছে পুকুরে।
এ ঘটনার জন্য সংসদ সদস্যের অনুসারীদের দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, স্বাস্থ্যসচিবের পরিবারের সদস্যদের দেয়া জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ চলছিল। এই ক্লিনিক নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তার অনুসারীরা। এ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল উত্তেজনা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে যান স্বাস্থ্যসচিব। শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশের ওই ক্লিনিকের কাজ দেখতে যান তিনি। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এ নিয়ে সচিবের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা চলে যান।
এর প্রায় দুই ঘণ্টা পরে কয়েকটি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে করে নির্মাণাধীন ক্লিনিকের সামনে যান শতাধিক লোক। লাঠি ও ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে তারা সচিবকে গালিগালাজ করেন। বন্ধ রাখতে বলেন নির্মাণ কাজ।
সচিবের বাড়িতে অবস্থান করা ভূমি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ঘটনা জানতে এগিয়ে যান। এ সময় তাকে পুকুরে ফেলা দেয়া হয়। মারধর করে বের করে দেয়া হয় নির্মাণশ্রমিকদের।
পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে যায় র্যাব।
স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদ (বাঁয়ে) ও স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গণমাধ্যমকে বলেন, লাঞ্ছিত করা হয়েছে ভূমি কর্মকর্তা আশরাফুল আলমকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে হামলাটি হয়েছে মূলত চানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মুরাদের নেতৃত্বে। তবে নিউজবাংলার কাছে মুরাদ দাবি করেন, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্লিনিকের রাস্তা করা নিয়ে স্থানীয়রা ভোগান্তির শিকার হওয়ায় তাকে (স্বাস্থ্যসচিব) জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিল। তখন স্বাস্থ্যসচিব তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিবের গণ্ডগোল হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করলেই এই ঘটনা এড়ানো যেত।’
নূর মোহাম্মদ কর্মজীবনে পুলিশের আইজি ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে নির্বাচিত হন।
স্বাস্থ্যসচিব ও ভূমি কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও কেউ রিসিভ করেননি। ফোনে পাওয়া যায়নি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতারুন নেছাকে।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব তার বাড়িতে কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ ছিলেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’