করোনার গণটিকা শুরু হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনকে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। একই দিন টিকা নেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।
নার্স রুনু ভেরোনিকা ডিকস্তাকে প্রয়োগের ১০ দিন পর রোববার সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে গণটিকা।
গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে কার্যক্রম উদ্বোধনের পর দুই দিনে টিকা দেয়া হয়েছে মোট ৫৭৭ জনকে। এদের কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য আসেনি।
সেদিনই জানানো হয়েছিল, সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে ৭ ফেব্রয়ারি। এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ৬০ লাখ টিকা।
প্রয়োগের জন্য সরকারের হাতে আছে মোট ৭০ লাখ টিকা। এর মধ্যে ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশ কিনেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। আর ২০ লাখ উপহার হিসেবে দিয়েছে দেশটি।
১০ লাখ টিকা এখনও কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের হাতে রাখা হয়েছে জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য।
গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে রুনু ভেরোনিকা ডি কস্তাকে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় টিকা প্রয়োগ
টিকা নিতে আগ্রহীরা গত ১০ দিনে নিবন্ধন করেছেন তিন লাখ ৮০ হাজার ১৩ জন। তবে শুরুতে নিবন্ধন ছাড়া টিকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। আগ্রহীরা টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে যেমন নিবন্ধন করতে পারবেন, তেমনি স্বাস্থ্যকর্মীরাও নিবন্ধনের জন্য যাবে বাড়ি বাড়ি।
রোববার সকাল ৯ টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে ভার্চুয়ালি টিকা প্রয়োগ উদ্বোধন করবেন। এরপর সকাল ১০ টায় মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেবেন তিনি।
শনিবার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খোরশীদ আলম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রথম দিন টিকা নেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও। তিনি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টিকা নেবেন।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে টিকা নেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন এবং বিভিন্ন স্থানে নেবেন আমরা জানতে পেরেছি।
জেলায় জেলায় ৬০ লাখ টিকা পাঠানো হয়েছে প্রয়োগের জন্য। সরকারের হাতে আছে আরও ১০ লাখ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টিকা নেবেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে সময়টা এখনও ঠিক হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান টিকা নেবেন সকাল ১০ টায় মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও টিকা নেবেন প্রথম দিন। তবে কোন হাসপাতালে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি।
খুরশিদ আলম বলেন, ‘এ রকম বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জেলা থেকে জনপ্রতিনিধিরা করোনার টিকা নেবেন।’
শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি ঢাকা থেকে অনলাইনে তার নিজ জেলা চাঁদপুরে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
এভাবে বিভিন্ন জেলার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিকাকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি পরিদর্শনও করবেন তারা।
বাংলাদেশ তিন লাখ ৪০ হাজার টিকা কিনেছে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। এ ছাড়া পৌনে সাত কোটি টিকা পাওয়া যাবে সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে উঠা জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। তারাও দেবে সিরামের টিকাই।
বাংলাদেশ যে টিকা কিনেছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে আসবে ৫০ লাখ করে। আর কোভ্যাক্সের টিকা আসবে জুন মাস থেকে।
প্রতি জনকে টিকা নিতে হবে দুটি করে। প্রথম টিকা দেয়ার চার সপ্তাহ পর দেয়া হবে দ্বিতীয়টি। যদিও প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল আট সপ্তাহ পর টিকা দেয়া হবে।
গত ২১ জানুয়ারি ভারতের উপহারের ২০ লাখ টিকা আসে দেশে। ২৫ জানুয়ারি আসে বাংলাদেশের কেনা টিকার ৫০ লাখ
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে ও গর্ভবতীদেরকে এই টিকা দেয়া হবে না। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত অ্যালার্জি, মাত্রাতিরিক্ত অসুস্থ এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার এক মাস পার না হলেও করোনার টিকা দেয়া হবে না।
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ৫৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকরা টিকা দানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, গণটিকাদান শুরুর দিন ১ হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। এ জন্য দুই হাজার ৪০২ জন স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্র ৫০টি।
যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের অনেকেই এসএমএস পাননি। তারা টিকা পাবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ রাতেই মধ্যে এসএমএস পেয়ে যাবে, যদি না যায় তারা পরবর্তীতে টিকা নেবেন।’
অনেক সাংবাদিক নিবন্ধন করতে পারছেন না- বিষয়টি জানালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ‘যেসব সাংবাদিকরা আমাদের কাছে তালিকা দিয়েছেন, তারা নিবন্ধন করতে পারছেন। পর্যায়য়ক্রমে সবাই নিবন্ধন করতে পারবেন।’
গুগল প্লে স্টোরে এখন অ্যাপ আসেনি কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলন, ‘অ্যাপ নিয়ে গুগল অনেকেগুলো শর্ত দিয়েছে। এগুলো পূরণ হলে অ্যাপ উন্মুক্ত করা হবে।’