মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে বগুড়ার সদরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার সভা চলাকালে হট্টগোল শুরু হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান।
বগুড়া সদরে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ছিল ৪৮২ জনের। যাচাইবাছাই শেষে ৯৮ জনকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৯২ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে গেজেট প্রকাশিত হয়। শনিবার এই গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাইবাছাইয়ের দিন ছিল সদর ইউএনও কার্যালয়ে।
যাচাইবাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) প্রতিনিধি আব্দুল কাদের, সদর আসনের সাংসদ গোলাম মো. সিরাজের প্রতিনিধি আইনজীবী সদরুল আনাম রঞ্জু ও আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ইউএনও।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে, শনিবার বেলা ১১টা থেকে যাচাইবাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। পাঁচজনের যাচাইবাছাইয়ের পর হট্টগোল শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কমিটি।
ইউএনও ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাচাইবাছাইয়ের সময় পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টুসহ তার পক্ষের কয়েকজন অভিযোগ তোলেন ওই কমিটিতে যারা আছেন, তারা (রঞ্জু ও কাদের) প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন।
‘রঞ্জু ও কাদেরের যাচাইবাছাই আমরা মানি না।’ এই বক্তব্যের জের ধরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে আইনজীবী সদরুল আনাম রঞ্জু নিউজাবংলাকে বলেন, ‘আমি মানবাধিকার কর্মী। আমি রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করি না। আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টুর সঙ্গে আমার আদালত কেন্দ্রিক বোঝাপড়ায় সমস্যা আছে। আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ নথি ও আইনগত দিক দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
‘কোনো অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রেজাউল করিম মন্টুই তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। অথচ আজকে তিনি লোকজনকে হয়রানির মধ্যে ফেলে দিলেন।’
ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মন্টুর অনুসারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জুর লোকজন এই অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘একটি দুর্নীতিবাজ মহল তাদের পছন্দের সাধারণ লোকজনকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্যই হট্টগোল সৃষ্টি করেছে। আমি চারবার বগুড়া সদরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ অবান্তর।’
তবে রেজাউল করিম মন্টুর বক্তব্য ভিন্ন। তার ভাষ্য, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমেই হতে হবে। এই কমিটির সভাপতি ও এমপির প্রতিনিধি কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন। তাদের মাধ্যমে যাচাইবাছাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অস্মান করা।
‘তাদের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের তদন্ত হলেই সঠিক বিষয়টি বোঝা যাবে। এ কারণে আমরা উপজেলায় গিয়ে যাচাইবাছাইয়ে বিরোধীতা করেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান মোবাইলে নিউজবাংলাকে বলেন, দুই পক্ষে আচরণ ও কথোপকথনে পরিবেশ খুবই উত্তপ্ত হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে পুলিশের সহায়তার পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। আর জামুকার সঙ্গে কথা বলে আপাতত যাচাইবাছাই বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জামুকার সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।