বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমা: ৬ বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ

  •    
  • ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৫:৪২

২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ৭৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয় ২০১৮ সালে। । তবে এখনও শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। ছয় বছর পরও বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিহত ও হতাহতদের স্বজনরা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধের মধ্যে গাইবান্ধায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয়। ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির ওই হামলার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি।

হামলায় নারী-শিশুসহ আট জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের ৭৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নিয়েছে আদালত। তবে এত বছর পরও শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ।

ছয় বছর পরও বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিহত ও হতাহতের পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনার দিন নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসটিতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন সুন্দরগঞ্জের চণ্ডিপুর গ্রামের রিকশাচালক তারা মিয়া। আগুন থেকে নিজে বাঁচলেও স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি।

তারা মিয়া বলেন, বিনা দোষে আগুনে দাউ-দাউ করে স্ত্রী ও ছেলে চোখের সামনে পুড়ে মরছে। কিন্তু আজও হত্যাকারীদের বিচার হলো না।

সন্তানদের সঙ্গে গাইবান্ধায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রল হামলায় স্ত্রী ও ছেলেকে হারানো তারা মিয়া। ছবি: নিউজবাংলা

একই গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, ছেলে সুমন মিয়া ঢাকায় কোম্পানিতে চাকরি করত। ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। কিন্তু সেদিন কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তুলসীঘাটে হামলায় নিহত হয়। আফসোস একটাই, অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জের বলরাম দাস বলেন, ‘বালুগাঁও কাজত যাচ্ছিনু বউ-বেটিক নিয়া। গাইবান্ধাত ওটি শব্দ করিল। পরে আগুন ধরিল। হুড়েমেকটার (ভিড়) সময়ে গাড়ি থেকে বউ নিয়ে নামছি। কিন্তু ছোট বেটিটা (ছোট মেয়ে) মোর পুড়ে মরিল।’

শুধু আট জনের মৃত্যু নয় ওই হামলায় আহত হন আরও প্রায় ৪০ জন। তাদের কেউ পঙ্গু হয়েছেন। অন্যরা বেঁচে আছেন শরীরে ক্ষত নিয়ে। ঘটনার পর সরকারিভাবে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করা হলেও পরে আর তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ।

বিচারক সংকটের কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শফিকুল ইসলাম শফিক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচার শুরুর পর মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর কারণে সাক্ষ্য গ্রহণে দেরি হচ্ছে। মৃত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সসহ অন্য আইনি প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে বিচার কার্যক্রমে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।

‘এ ছাড়া গত এক বছর ধরে গাইবান্ধা আদালতে বিচারক সংকট রয়েছে। নতুন বিচারক নিয়োগ হলেই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।’

চলতি বছরই এ মামলার বিচার আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে দেশজুড়ে টানা হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। সেই কর্মসূচির মধ্যে ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে গাইবান্ধার বুড়িরঘর এলাকায় সুন্দরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয়।

হামলায় পুরো বাসে আগুন ধরে ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যায় শিশুসহ ছয় জন। চিকিৎসা চলার সময় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় আরও দুই জন। এ ছাড়া আহত হয় শিশুসহ অন্তত ৪০ জন।

ওই হামলার শিকার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর ও রিকশাচালক। তারা রাজধানীতে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন।

এ ঘটনার পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ও জামায়াত-শিবিবের ৬০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ৩০ জনের নামে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় বিচার। তবে বিচার শুরুর কয়েক দিন পরই মামলার প্রধান আসামি গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি মোস্তফা মনজিল র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। পরবর্তী সময়ে আরও চার আসামির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক জন পলাতক রয়েছেন। বাকি সব আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর