করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা দান শুরু হচ্ছে বোরবার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার কথা বললেও নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা অ্যাপ এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি। ফলে টিকাপ্রত্যাশীদের একমাত্র ভরসা ওয়েবসাইট। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়েও টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
টিকার জন্য ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় লাখ লোক নিবন্ধন করেছে। কিন্তু এ মাসে সরকারের ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নিবন্ধন এত কম হওয়ায় নিবন্ধনের কড়াকড়ি শর্তে কিছু শিথিলতা আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন ‘অফলাইনেও’ নিবন্ধনের সুযোগ মিলছে।
গত ২৭ জানুয়ারি টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিকেলে টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়। ওই দিনেই মোবাইলের গুগল প্লে স্টোরে ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ চালু করার কথা থাকলেও নিবন্ধনের জন্য সেটি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, টিকা নিতে এখন পর্যন্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে। এখন সুরক্ষা অ্যাপ প্রক্রিয়াধীন।
এত দিনেও কেন অ্যাপটি উন্মুক্ত করা গেল না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ প্রায় শেষ। গুগলের কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন হলে অ্যাপ উন্মুক্ত করা হবে।’
কবে উন্মুক্ত হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। আমাদের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। উন্মুক্ত হলে আমরা অবশ্যই আমাদের সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে জানাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকেরা নিবন্ধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকার প্রয়োজন নেই। ৫৫ বছরের কম বয়সী যারা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের মেইলে (linedirector@mis.dghs.gov.bd) জাতীয়পরিচয়পত্র নম্বর পাঠাতে হবে।’
করোনা টিকা পেতে নিবন্ধন বাড়াতে এবং যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন না, তাদের বাড়িতে গিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধনে সহায়তা করবে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, বিভিন্ন টিকার কার্যক্রম বা স্বাস্থ্যসেবা দিতে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যান, তারা অপারগদের টিকার নিবন্ধন করতে সহায়তা করবেন। এছাড়া ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেও তারা সহযোগিতা পাবেন। তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করা হবে। সহায়তা করবেন ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা সহকারী কর্মীরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক টিকা কেন্দ্রে একটি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি নিবন্ধন বুথ প্রস্তুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিবন্ধন-সংক্রান্ত কাজে সহযোগিতার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে সহযোগিতা নেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হলো।’
বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে, জানতে চাইলে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাদের সবাইকেই নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর বাকি যারা আছেন, আশা করছি তারা আজকালের মধ্যে শুরু করে দেবেন।’
দেশে বর্তমানে ভারতের উৎপাদিত করোনা প্রতিরোধী কোভিশিল্ড টিকার ৭০ লাখ ডোজ মজুত আছে। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ ডোজ এবং সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
সিরাম থেকে তিন কোটি ডোজ কিনতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সরকারের সঙ্গে সিরামের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে। প্রথম মাসে কেনা ৫০ লাখের মধ্যে ৪৯ লাখ টিকা দেশের ৬১ জেলায় বিতরণের তালিকা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘গণটিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রোববার টিকাদান উপলক্ষে কর্মীদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭ হাজার ৪০০ টিম কাজ করছে। রাজধানীসহ দেশে ৩২০ থেকে ৩৩০টি কেন্দ্রে করোনা টিকা দেয়া হবে।’