রেলওয়েতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তাদের মধ্যে ট্রেনে ব্যাগ ফেলে রাখা বা মোবাইল হারানোর ঘটনা অনেকের সঙ্গে ঘটেছে। আর পাওয়া যাবে না ভেবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কয়জন?
ট্রেনে ফেলে রাখা ব্যাগের বিষয়ে যাত্রীর ফোন পেয়ে তার হাতে তুলে দিয়েছেন লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক রঞ্জু মিয়া (এএসআই)।
রঞ্জু মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, তিনি বেশিরভাগ সময়ই ট্রেনে ফেলে যাওয়া যাত্রীদের মোবাইল, ব্যাগ ও বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন কারো মোবাইল হারায় বা ব্যাগ হারায় তখন থানায় জিডি করতে হয়। কিন্তু অনেকে এ কাজটি করতে চান না। আবার হারিয়ে গেলেও আর কখনও খোঁজও করে না উদ্ধারের জন্য। আবার জরুরি কিছু হলে অনেকে খোঁজাখুঁজি করেন।’
রঞ্জু মিয়া গত ১০ জানুয়ারির একটি ঘটনা তুলে ধরেন।
সেদিন লালমনি এক্সপ্রেসে ঢাকা আসা এক যাত্রী বিমান বন্দর রেল স্টেশনে নামেন। ট্রেনেই একটি ব্যাগ ভুলে রেখে চলে যান।
রেল পুলিশের এই সদস্য বলেন, ‘এক টোকাই যাত্রী সেজে ব্যাগটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি ওই তাকে ধমক দিয়ে ব্যাগটি আমার হেফাজতে নেই। তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বলেন আপাতত ব্যাগটি আমার কাছে রাখতে।
উদ্ধার করা ব্যাগ
‘রাত তখন ১০টা প্রায়। আমি ট্রেনে থাকা মাইকে এলান দেই কেউ ব্যাগ রেখে চলে গেছে কি না। ব্যাগটি মালিকের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় আমি ব্যাগের ভিতর থাকা জিনিসপত্র খুঁজতে থাকি। আইডি বা মোবাইল নম্বর আছে কি না খুঁজতে খুঁজতে দেখি একটি আইডি কার্ড ও ২/৩টি মোবাইল নম্বর রয়েছে।
‘ট্রেন আবার লালমনিরহাটের পথে। চলন্ত ট্রেনেই ব্যাগে পাওয়া নম্বরগুলোতে ফোন দিতে থাকি। একটি নম্বরে জিজ্ঞেস করি, রাকিব খানকে চিনেন? ওনার বাড়ি কোথায়? তখন এক মহিলা উত্তরে জানান যে, তিনি রাকিব খানকে চেনেন ও ওনার বাসা বগুড়ায়।’
রঞ্জু মিয়া আরও বলেন, ‘তখন আমি আরও চিন্তিত হয়ে পড়ি কারণ আমার বাড়িও বগুড়ায়। ব্যাগের মূল মালিককে তো খুঁজে বের করতে হবেই। তখন ওই মহিলার সাহায্যে ব্যাগের মালিকের ফোন নম্বর খুঁজে পাই।
‘পরে ওই যাত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা হয় আমার। আমি তাকে নিশ্চয়তা দেই যে ব্যাগটি আমার কাছে আছে। ততক্ষণে ট্রেন লালমনিরহাটে চলে আসে। ১১ জানুয়ারিতেই লালমনিরহাটে তার পরিচিত এক জনের কাছে আমি ব্যাগটি হস্তান্তর করি।’
এ এস আই রঞ্জু বলেন, ‘আমরা প্রায়ই এ ধরনের কাজ করি। কারণ আমাদের কাজই হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা দেয়া। তাদের মালামাল দেখাশোনা করা। যখন মূল মালিককে খুঁজে পেয়ে তার মালামাল বুঝিয়ে দিতে পারি তখন আনন্দ ধরে রাখতে পারি না।’
পুলিশ পেশা বেছে নেয়ার কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশে আসছি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে। কেননা এখানে সাহায্য করার সুযোগ একটু বেশি থাকে। আর আমি যে থানায় আছি সেখানে আমি অনেক অনুপ্রেরণা পাই আর এই অনুপ্রেরণা আমার কাজকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়।’