ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যর কান কারা ভাঙল তার সুরাহা হয়নি এখনো।
শুরু থেকেই ধারণা করা হয়, ভাস্কর্যবিরোধীরাই এটি ভেঙেছে৷ তবে ঘটনার দুই মাস পর প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলছেন, ভাস্কর্যের সেই অংশটি ইচ্ছা করে ভাঙেনি কেউ, ভেঙেছে ‘অসতর্কতাবশত’।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত নভেম্বরে ধর্মভিত্তিক বেশ কিছু দল আন্দোলনে নামে। সে সময় ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া ছাড়াও আরও নানা হুমকিধমকি আসে এসব দলের পক্ষ থেকে।
এর মধ্যে ২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে থাকা মধুসূদন দের ভাস্কর্যের একটি কান ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নজরে এলে রাতেই ভাঙা অংশটি পুনঃস্থাপন করা হয়।
তখন প্রক্টর গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ভাস্কর্যে আঘাতটি খেয়ালের বশে হয়েছে, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে কাজটি করেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।’
ভাস্কর্যটি কীভাবে ভাঙল, এর সঙ্গে কারা জড়িত, সেটি খুঁজে বের করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রক্টর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ এটি মেইন রাস্তার পাশে হওয়াতে অসতর্কতাবশত ভেঙে পড়েছে এই মর্মে আমরা অবগত হয়েছি। তারপরও কোনো ধরনের প্রমাণ পেলে কে করেছে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
অসাবধানতাবশত আবার ভাস্কর্য ভাঙে কেমনে?- এমন প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, ‘কানের অংশটি যেভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, সেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে কারও হাতের চাপে পড়ে হয়তো এটি ঘটেছে।’
তবে প্রক্টরের এমন বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলছেন চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন৷ এই অধ্যাপক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাস্কর্যে আঘাতের বিষয়টি প্রক্টরের সামনে ঘটে থাকলে তখনই উনি এই কথা বলতে পারেন। কিন্তু ওনার সামনে না হয়ে থাকলে এ ধরনের কথা বলা দায়িত্বজ্ঞানহীন।’
তিনি বলেন, ‘কদিন আগে রাজু ভাস্কর্যের তলায় নারীদের হিজাব পরতে বলার লেখা-সংবলিত একটি ব্যানার লাগিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। রাজু ভাস্কর্যের মতো জায়গায় যদি তারা এটি লাগাতে পারে, সেখানে নিরিবিলি একটা জায়গায় কিছু দিয়ে আঘাত করে ভাস্কর্যের কান বা নাক ভাঙা তাদের জন্য কঠিন কিছু নয়৷’
প্রক্টরের বক্তব্যের বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অসতর্কতাবশত ভাস্কর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়ে যাবে, এটা হতে পারে না। অবশ্যই সেটি ভাঙা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার এত দিন পর এসে যদি প্রক্টর বলেন এটি অসতর্কতাবশত ভাঙা হয়েছে, তাহলে আমরা মনে করি এটার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্টরাও জড়িত।’
মধুসূদন দে, যিনি মধুদা নামেই বহুল পরিচিত, ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত মধুর ক্যানটিনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করে।
তার স্মৃতির স্মরণে তাঁর নামেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত রেস্তোরাঁটির নামকরণ করা হয় ‘মধুর ক্যানটিনে’।