বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফের ট্রেনের তেল নিয়ে তেলেসমাতি

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৬:১২

‘রাতে টর্চলাইটের আলো দিয়ে ১২ লিটার সংগ্রহ করেছি। আর শুক্রবার সকালে ৬ লিটার তেল সংগ্রহ করতে পেরেছি। তবে দিনে পুলিশের বাধার কারণে বেশি তেল নেয়া যায়নি।’

আগের রাতেই যে জমি ছিল পানিশূন্য শুষ্ক, সেই জমিই এখন কাদার মতো থিকথিক করছে। যেন রাতের ভারী বৃষ্টিতে পানি জমেছে জমিজুড়ে।

তবে কোনো বৃষ্টি হয়নি এখানে। পানিও জমেনি। পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বালানি তেল। আর হুড়োহুড়ি করে সেই তেল সংগ্রহ করছেন আশপাশের কয়েক শ মানুষ। নারী-পুরুষ-শিশু কেউই নেই পিছিয়ে।

কে কার থেকে বেশি তেল সংগ্রহ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলছে।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁওয়ে শুক্রবার দুপুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় মাইজগাঁওয়ের গুতিগাঁও এলাকার তেলবাহী একটি ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। লাইনচ্যুত বগিগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে জ্বালানি তেল। তেল ছড়িয়ে পড়ে রেললাইনের পার্শ্ববর্তী জমি এমনকি পুকুরেও।

বালতি-জগসহ যা পেয়েছেন তাই নিয়েই এসব তেল সংগ্রহে রাত থেকেই ভিড় করছেন স্থানীয়রা। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ট্রেনের বগি উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে।

তেল সংগ্রহে আসা জনতাকে সরাতে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। জ্বালানি তেল থেকে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বছরের ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ও ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। শ্রীমঙ্গল ও মাধবপুরে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শত শত মানুষ এসব তেল সংগ্রহে জড়ে হন।

লাইনচ্যুত বগি থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। ছবি: নিউজবাংলা

দেশের সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ রেলপথ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-সিলেট রেলপথের সিলেট-আখাউড়া সেকশনে চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বার তেলবাহী ট্রেন উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। তিনটি দুর্ঘটনার পরই তেল নিয়ে রীতিমত হরিলুট লেগে যায়।

মাইজগাঁওয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে কী পরিমাণ জ্বালানি তেল ছিল এবং কী পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়েছে, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।বালতি নিয়ে তেল সংগ্রহে এসেছিলেন গুতিগাঁও এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ট্রেনের তেল সবাই নিচ্ছে তাই আমিও নিচ্ছি। এগুলো তো এমনিতেই নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা নিলে ক্ষতি কী?’

সিরাজ মিয়া আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনার পরই তেল সংগ্রহে নামি। রাতে টর্চলাইটের আলো দিয়ে ১২ লিটার সংগ্রহ করেছি। আর শুক্রবার সকালে ছয় লিটার তেল সংগ্রহ করতে পেরেছি। তবে দিনে পুলিশের বাধার কারণে বেশি তেল নেয়া যায়নি।’

লাইনচ্যুত বগি থেকে তেল ছড়িয়ে পড়েছে রেললাইনের পার্শ্ববর্তী জমিতে। ছবি: সাংবাদিক নাজমুস সালেহী

একই এলাকার হাদী উদ্দিনও তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। যেতে যেতে আফসোস করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের ভয়ে বেশি তেল সংগ্রহ করতে পারিনি। মাত্র ৪ লিটার সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।’

ওই এলাকার গৃহিণী আফিয়া বেগম বলেন, ‘ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই তেল সংগ্রহ করছে। তাই আমিও এসেছি। এখন পর্যন্ত এক বালতি তেল সংগ্রহ করতে পেরেছি।’

ট্রেনের বগি থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল পড়েছে রেললাইনের পাশের একটি পুকুরেও। এই পুকুরের তেলমিশ্রিত পানিও পাত্রে করে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী।

পুকুরের মালিক লিয়াকত আলী বলেন, ‘আশপাশের জমি, খাল ও পুকুর তেলে ভরে গেছে। যে যার মতো নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পুকুর থেকেও নিয়ে যাচ্ছে। শত শত মানুষ তেল নিতে এসেছে। বাধা দিয়েও কোনো লাভ নেই।’

তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি তেল। ছবি: নিউজবাংলা

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বগি লাইনচ্যুত হয়ে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রেল চলাচল স্বাভাবিক করতে দুটি টিম কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে এই দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর