বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে আবারও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

  •    
  • ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:২৫

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, মাদারীপুর ও বাগেরহাটের কেউ আবেদন করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়। তারপরও বরিশালের অনেকে অন্য জেলার ঠিকানা দেখিয়ে আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৩২ জন কর্মচারীর নিয়োগ পরীক্ষা শুক্রবার হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান পরিচালক বাকির হোসেন ৭ মার্চ অবসরে যাওয়ার কথা। এর আগে তিনি এই কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাকরিপ্রত্যাশীদের কয়েকজন নিউজবাংলাকে বলেন, পরিচালক অবসরে যাওয়ার আগে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তার ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। পরীক্ষা হবে কেবল নিয়ম রক্ষার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়াবেসাইটের তথ্যে, গত ডিসেম্বরে হাসপাতালটির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১২টি ক্যাটাগরির ৩২টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, মাদারীপুর ও বাগেরহাটের কেউ আবেদন করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু রহস্যজনকভাবে বরিশাল বিভাগের ভোলাকে আবেদনের আওতায় আনা হয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করার দায়িত্বও তার হাতে ছিল। বর্তমান পরিচালকের যোগসাজশে নিজ জেলা ভোলাকে রাখা হয় আবেদনের আওতায়। বাদ দেয়া হয় বরিশাল বিভাগের অন্যান্য জেলার নাম।

আরেকজন জানিয়েছেন, হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম ওরফে তাজুল। বরিশাল নগরীর রুপাতলীর বাসিন্দা তাজুলের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাজুখান গ্রামের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে ড্রাইভার পদে আবেদন করেছেন। তিনি শুক্রবার অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত অফিস সহকারী সৈয়দ আবদুল মান্নান গেল নিয়োগে নানা প্রক্রিয়ায় ভাগনেসহ পাঁচজনকে চাকরি পাইয়ে দেন। এবারে তার মেয়ের চাকরির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরিশালের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও বর্তমানে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ল্যাব সহকারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত তার মেয়ে সৈয়দা তাজিন আক্তারকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বানীপুর গ্রামের ঠিকানা দিয়ে টেলিফোন অপারেটর পদে আবেদন করিয়েছেন। তাজিনও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

গেল নিয়োগে বরিশালের ঠিকানায় ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার পর এবার মেয়ে মারজানা আক্তারকে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মাদারকোল গ্রামের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে টেলিফোন অপারেটর ও কিপার পদে দুটি আবেদন করিয়েছেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের কবির।

হাসপাতালের বর্তমান প্রধান সহকারী আলমগীর হোসেন সিকদার বরিশালের বাসিন্দা। কিন্তু ভোলা জেলার চরনোয়াবাদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চরনোয়াবাদ সড়কের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে তার মেয়ে অর্পিতা ইয়াসমিনকে টেলিফোন অপারেটর ও হিসাব রক্ষক সহকারী পদে আবেদন করিয়েছেন।

এভাবেই বরিশালের বাসিন্দা হয়েও একাধিক আবেদনকারী অন্য জেলার পরিচয় দিয়ে আবেদন করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফলে আবেদনগুলো সঠিক যাচাই-বাছাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, নিজ ঠিকানা গোপন রেখে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সনদ দিয়ে আবেদন করা হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন। তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন হিসাব নিকাশ করে বরিশাল বিভাগের ভোলা বাদে অন্য জেলার কেউ আবেদন করতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরই নয়, বাগেরহাট ও মাদারীপুরের বাসিন্দারাও আবেদন করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তো কারও চাকরি করেন না। তার আন্ডারে আমরা না। সে নিয়োগ কমিটির মেম্বারও না। সে নিয়োগের ব্যাপারে শুধু সহায়তা করতে পারে। তা ছাড়া যারা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন বাতিল অথবা মৌখিক পরীক্ষায় বাতিল হয়ে যাবে। আমরা তো এনআইডি কার্ড দেখব। এখানে পাঁচ সদস্যর কমিটি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে ডিসি সাহেবের প্রতিনিধি এডিসি সাহেব রয়েছেন। বিরাট একটি শক্তি রয়েছে নিয়োগ কমিটিতে। আপনারা শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা প্রভাবমুক্ত থাকব। দীর্ঘ দিন ধরে এই হাসপাতালে কর্মচারী সংকট চলছে। এই অবস্থায় ওই ৩২টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। যথাযথভাবে মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে।’

এর আগে ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৭২ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর দীর্ঘ দিন চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই বাছাই করা হয়। একাধিক পরিচালক বদলি হওয়ায় যথাসময়ে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল জলিলের সহায়তায় তৎকালীন পরিচালক নিজাম উদ্দিন ফারুক ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর নিয়োগ দেন।

১৭২ পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয় ২১২ জনকে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুনীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে। পরে নিয়োগপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতের রায়ে আবার যোগ দেন।

তবে তৎকালীন পরিচালক নিজাম উদ্দিন ফারুক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল জলিলসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নিজাম ও জলিলের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল কার্যালয়ের এক সহকারী পরিচালক। মামলাটি বিচারাধীন।

এ বিভাগের আরো খবর