জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেয়া ও আটক রেখে তল্লাশির অভিযোগে অভিনেত্রী শমী কায়সারের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শমী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে বুধবার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই পরিদর্শক মো. লুৎফুর রহমান।
ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম সত্যব্রত শিকদার আগামী ৪ মার্চ বাদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন।
মামলার বাদী স্টুডেন্ট জার্নালের সম্পাদক নুজহাতুল হাসান বুধবার আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্সভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘বিন্দু ৩৬৫’ এর উদ্বোধন করতে যান শমী কায়সার।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে কেক কাটার সময় হঠাৎ করে শমী জানান, তার স্মার্টফোন দুটি পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে মিলনায়তনে হইচই পড়ে যায়। মিলনায়তনের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন আয়োজকরা।
ওই সময় আয়োজকরা সবার শরীর তল্লাশি করার কথা বললে উপস্থিত অনেকেই অসম্মতি জানান। তবে কেউ কেউ তল্লাশির শর্তে বের হতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। তখন দর্শকসারি থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন ‘আমরা চোর নাকি, তাহলে কেন বের হতে দেবেন না’। এই কথা নিয়ে মিলনায়তনে হট্টগোল হয়। বিষয়টি নিয়ে পরে সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শমী কায়সার তার দুটি স্মার্টফোন হারিয়ে মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা একজন লাইটিং কর্মী ফোন দুটি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে শমী কায়সার তল্লাশির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। যদিও তার ফোন দুটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে শমী কায়সারের দ্বারা বাদীকে বা উপস্থিত কোনো সাংবাদিক বা উপস্থিত অন্য কোনো ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে চোর বলে মন্তব্য করা, আটকে রাখা, তল্লাশি করা, আটকে রেখে তল্লাশি করার নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ ছাড়া বাদী নিজেও এরূপ কোনো প্রকার সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এ-সংক্রান্ত কোনোরূপ স্থিরচিত্র বা ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করতেও বাদী ব্যর্থ হয়েছেন। বাদীর অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনাটি অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা রক্ষীদের অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়াবাড়ির কারণে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা ছিল বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানে নেয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর এই মামলায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা পায়নি’ মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব রহমান। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী নুজহাতুল হাসান।
সেই নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে একই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগটির অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।