বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রণোদনার গ্যারান্টির পেঁয়াজবীজে সর্বস্বান্ত কৃষক

  •    
  • ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২২:১৩

কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া প্রণোদনার বীজে গজায়নি চারা। অধিদপ্তর বলছে, কৃষকদের কাছ থেকেই চারাগুলো কেনা হয়েছিল ৮০ শতাংশ গজানোর গ্যারান্টিতে। কিন্তু সেটি হয়নি। তাই প্রণোদনায় যেসব কৃষককে সেই বীজ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে ক্ষতির সম্মুখীনই হয়েছে। তাদের আবারও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।

রাজশাহীর দুর্গাপুরে সরকারি প্রণোদনার বীজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে কপাল পুড়েছে প্রায় ছয়শ কৃষকের। বীজ থেকে ৮০ শতাংশ চারা গজাবে বলে গ্যারান্টি দিলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা গজিয়েছে ১০ শতাংশের কম। ফলে পড়ে আছে ফাঁকা মাঠ।

বীজতলায় চারা না গজানোয় অনেকে কৃষক এবার পেঁয়াজ চাষই করতে পারছেন না। এতে একদিকে পেঁয়াজ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে, জমি প্রস্তুত ও চাষের শুরুতে খরচ হওয়া টাকারও লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার পুরোটাই কৃষকের পকেট থেকে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও কৃষকদের ক্ষতি ও লোকসানের কথা স্বীকার করেছে। তারা বলছে, শীতের কারণে এমন সমস্যা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবারও প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের শেষের দিকে চাষিদের সহযোগিতার জন্য সরকারিভাবে প্রতি কৃষককে ২৫০ গ্রাম করে পেঁয়াজ বীজ দেয়া হয়। দুর্গাপুরের ছয়শ জনকে দেয়া হয় ১৫০ কেজি পেঁয়াজের বীজ। সরকারিভাবে ছয়শ টাকা কেজি দরে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করা হয়।

রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রণোদনার পেঁয়াজবীজে গজায়নি চারা।

এসব বীজ কেনার সময় ৮০ শতাংশ জন্মাবার গ্যারান্টি দেয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। তবে নামমাত্র দুই এক জায়গায় পেঁয়াজের বীজ থেকে চারা বের হলেও বেশিরভাগ কৃষকেরই সেই বীজ থেকে চারা গজায়নি। তাই বীঝতলাও পড়ে আছে ফাঁকা।

দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা, দেবীপুর, জয়নগর, সিংগাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। অনেক জমিতে একটিও চারা গজায়নি। পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, মূলত প্রণোদনার বীজেই এই সমস্যা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে ঝালুকা এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে আমাকে এই বীজ দিয়েছিল, আমি চারা উৎপাদনের জন্য বপন করলে ১ থেকে ২ ভাগ চারাও বের হয়নি। আমি ২৫ শতাংশ জমি রেখেছিলাম পেঁয়াজ লাগানোর জন্য। এবার আর পেঁয়াজ লাগানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। পেঁয়াজ চারা কেনার সামর্থ্য আমার নাই।’

পেঁয়াজ চাষি আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের এই বীজ দেয়া হয়েছে প্রণোদনার অংশ হিসেবে। এই বীজে চারা করার জন্য লাগিয়ে একটি গাছও উঠেনি। আমার জমিটা পড়ে থাকবে, আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।’

তিনি অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্টরা কৃষকদের ক্ষতি করে প্রধানমন্ত্রীর থেকে টাকা নিয়ে ঠিকই পকেটে ঢুকিয়েছে। এ বছর তাদের কারও পেঁয়াজ চাষ হবে না, তারা এর ক্ষতিপূরণ চায়।

জয়নগর এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘প্রণোদনার বীজ কোন কাজে আসছে না। ৮ কাঠা জমি লাগনোর জন্য রেখেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বীজ নিয়ে এমন দুর্নীতি করল। আমি এর ক্ষতিপুরণ চাই।’

উপজেলার সিংগা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কৃষক জানান, ভুয়া বীজের কারণে তিনিও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতো দাম দিয়ে চারা কেনা সম্ভব না। এমন প্রতারণাকারীদের শাস্তি হওয়া দরকার।

দুর্গাপুর কৃষি অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি নিয়ে বেশ বিপাকে আছি।’

রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রণোদনার পেঁয়াজবীজে গজায়নি চারা। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকেই আমরা বীজ কিনে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছিলাম। তবে শীতের কারণে এগুলো অনেক জায়গায় সমস্যা হয়েছে। আমাদের যদিও বিক্রির ৮০ শতাংশ সফলতার গ্যারান্টি দিয়েছিল। তবে সেটি হয়নি। তাদের দিকেও দেখতে হচ্ছে।

‘তাদের কিছু পরিমাণ জরিমানা করে কিছু টাকা দেয়া হবে। আর যেসব কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে, তাদের আবার অন্য কোনো প্রণোদনার সহযোগিতা দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘আমাদের এসব বীজে শীতের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কিছুটা কম আকারে গজিয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। আগামীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবারও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর