ভারতের মাটি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান যেতে বাংলাদেশ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে প্রতিবেশী দেশটি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলবাণিজ্যে আগ্রহ রয়েছে ভুটানেরও। আর বাংলাদেশ এই বাণিজ্যে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকেও যুক্ত করতে চায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমন্ত্রণ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি নয়াদিল্লি যান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পরদিন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ষণ শ্রিংলার সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সে বৈঠকে ভারতের সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে নেপাল ভুটানে পণ্য আনা-নেয়ার প্রস্তাব দ্বিতীয়বারের মতো তোলে ঢাকা।
এই প্রস্তাবটি বাংলাদেশ প্রথম দেয় গত ১৭ ডিসেম্বর। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও ভারতীয় সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে ভার্চুয়াল সামিট হয়, তাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়।
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে কথা বলেন বিষয়টি নিয়েও।
বাংলাদেশ-ভারত ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ট্রান্সজিটের প্রস্তাব দেন
বাংলাদেশের প্রস্তাবের অগ্রগতি আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক কিছুই হবে মোদির এই সফরে। উই প্রোগ্রেসিং স্মুথলি। আমি সবগুলো বলতে পারব না। একটি গ্রুপ এটা নিয়ে কাজ করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেয়েছি কানেক্টিভিটি। ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান যেতে চেয়েছি। তারা তা ভালোভাবেই মানে একোমেটিটিভ অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছে।’
বাংলাদেশ-ভারত, নেপাল, ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে একটি সমঝোতা আছে, যা বিবিআইএন এমভিএ (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট) নামে পরিচিত।
পরে ভুটান সেখান থেকে বের হয়ে যায় তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে। এরপর তখন সেটা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিআইএন) হয়ে যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ভুটানও এগিয়ে আসতে চাচ্ছে। তাদের কিছু নির্দিষ্ট অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে।’
বাংলাদেশ নেপাল, ভুটানকে যুক্ত করার পাশাপাশি ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়ার কথাও জানিয়েছেন মোমেন।
বলেন, ‘তারা অ্যাগ্রি করেছে। দে আর কনসিডিয়ারিং। এটা নতুন প্রস্তাব। আগে যেহেতু আমরা বলিও নাই কখনো।’
সম্প্রতি ভারতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের হর্যবর্ধন শ্রিংলা
ভারত বরাবরই বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে তার পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেতে আগ্রহী। শর্তসাপেক্ষে নৌ ট্রানজিট দেয়া হলেও স্থলপথে ট্রান্সশিপমেন্টের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সালে। চার বছর পর ২০১৬ সালের ১৬ জুন নৌ-প্রটোকলের মাধ্যমে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে, আর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত সড়কপথে নির্দিষ্ট মাশুল দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার সুযোগ পায় ভারত। তবে সড়কপথে সরাসরি ট্রানজিট সুবিধা এখনো দেয়া হয়নি, যেটা নিয়ে ভারতের আগ্রহ বেশি।
এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পরিবহন শুরুর পর এখন এই দুই বন্দর থেকে আসাম ও পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনে মাশুল নিয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি দুই টাকা হারে মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ভারতের আপত্তিতে তা কমিয়ে এক টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যরা
এ হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৫ টনের ট্রাকে সড়ক ব্যবহার মাশুল ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭০ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শেওলা রুটে এটি হবে ৯ হাজার ৫৯৩ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিবিরবাজার রুটে মাশুল ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯৯৮ টাকা, আর তামাবিল রুটে ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯ টাকা।
মোংলা বন্দর থেকে আখাউড়া মাশুল দাঁড়াবে ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা। মোংলা থেকে বিবিরবাজার রুটে তা হবে আট হাজার ৬৮৬ টাকা। মোংলা থেকে শেওলা রুটে হবে ১১ হাজার ৭৭৯ টাকা। আর মোংলা থেকে তামাবিল রুটে হবে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা।