ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে যেতে চান।
ভারতের কোনো সরকারপ্রধান এর আগে জাতির পিতার সমাধিস্থলে যাননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ দেশে আসছেন মোদি। এই দুই উৎসবের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিও এই সফরের আরও একটি কারণ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দেয়া ভারত। এরপর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেয় ভারতের সেনাবাহিনীও। আর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঢাকা।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, মোদির সফরের সূচি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘ইয়েস। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর হচ্ছে। আমাদের পররাষ্ট্র সচিব গিয়েছিলেন। সেখানে ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। ২৬ তারিখে তিনি আসবেন। ২৭ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হাই লেভেল মিটিং হবে। ইটস মোর লেস দেন অল সেট।’
মোদি টুঙ্গিপাড়ায় যেতে চান বলে যে গুঞ্জন, সেটি কতটা সত্য, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা মনে হয় এখনো ফাইনালাইজড হয় নাই। উনি প্রস্তাব দিয়েছেন। উনি ওইখানে যাবেন। টুঙ্গিপাড়া। যাবেন। এটা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজের চাওয়া।’
স্বাধীনতা সড়ক
সফরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের স্থল মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ভারতের… পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
সড়কের ভারতের অংশটি চালু আছে। নতুন এক কিলোমিটার তৈরি করে এতে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরকে যুক্ত করা হচ্ছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল সংলাপে এই প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। রাজি হন মোদি।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ভারত থেকে এসে প্রবাসী বাংলাদেশি সরকার মুজিবনগরে এসে শপথ নিয়ে আবার ফিরে গিয়েছিল।
হাসিনা-মোদি বৈঠক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মোদি।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রী সব শেষ ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তারও আগে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে সরাসরি বৈঠক হয় দুই সরকারপ্রধানের।
মুজিববর্ষ উদ্বোধনের দিন গত বছরের ১৭ মার্চই মোদির দেশে আসার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসার পর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জমকালো আয়োজনে পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এই সফরের সূচি চূড়ান্ত করতে গত ২৮ জানুয়ারি নয়া দিল্লি যান পররাষ্ট্র সচিব। এই সফরে মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্রও নিয়ে যান। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মোদির ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ট্যারিফ ও নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়ার দাবি জানানো হয়। দাবি জানানো হয়, বর্ডার কিলিং শূন্য কোটায় নামিয়ে আনার শীর্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে।
বাংলাদেশের পক্ষ সড়ক ও রেলপথে ভারতের মাটি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগও চাওয়া হয়।
দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল (বিআইএন) মোটর ভেহিকেল চুক্তি বাস্তবায়নেরও দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
কোভিড-১৯-এর কারণে দুই দেশের মধ্যে এপ্রিল থেকে চালু হওয়া এয়ার বাবল কার্যকর না হওয়ায় বাংলাদেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া অভিন্ন ছয় নদীর পানিবণ্টন ও তিস্তা চুক্তির বিষয়েও তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবকে ভারতীয় ঋণের টাকায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের গতি আনতে অনুরোধ জানান পররাষ্ট্র সচিব।
মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে স্থিতিশীলতা আনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও ভূমিকা রাখারও অনুরোধ করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার প্রস্তাবও তুলে ধরেন।