বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কবর সংরক্ষণ শুধু বিত্তবানদের জন্য

  •    
  • ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:৩২

এখন যদি কেউ ঢাকায় একটি কবর ২৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে তাকে এলাকাভেদে ২০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

পুরান ঢাকার আগামসীহ লেনের বাসিন্দা শুক্কুর আলী পেশায় রেস্তোরা ব্যবসায়ী। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসে থিতু হন তিনি। পরে এই শহরেই একে একে মৃত্যু হয় তার বৃদ্ধ বাবা-মা, এক সন্তান, স্ত্রী ও একমাত্র বোনের। তাদের প্রত্যেককে কবর দেয়া হয় আজিমপুর কবরস্থানে।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় শুক্কুর আলী তার মৃত সব স্বজনের কবর হারিয়েছেন। প্রতিটি কবরের ওপরে অন্য কাউকে কবর দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে চারটি কবর আবার বাঁধাই করিয়েছেন আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা।

শুক্কুর আলী বলছিলেন, ‘ঘর-বাড়ি হারায়া ঢাকায় আসছিলাম। তাই বাড়িতে কবর দেয়ার জন্য কাউরে নিতে পারি নাই। আপনার মাইনষের (আপনজনের) শেষ চিহ্নডা সবাই বাঁচাইতে চায়। ট্যাকা-পয়সা থাকলে বন্দোবস্ত নিয়া আমিও সবার কবর বান্ধায়া রাখতাম।’

মৃত্যুর পর ঢাকা শহরে কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা স্থায়ীভাবে কেনার সুযোগ অনেক দিন থেকেই নেই। এখন পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের কবরস্থানগুলোতে অল্প কিছু কবর নির্দিষ্ট মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও তার আর্থিক মূল্য শুক্কুর আলীর মতো সাধারণ মানুষদের নাগালের বাইরে।

দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার কবরস্থানগুলোতে জায়গার সংকট প্রকট। এ কারণে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থাও সীমিত। তাই চাইলেও যে কেউ কবর সংরক্ষণ করতে পারেন না।

এখন যদি কেউ ঢাকায় একটি কবর ২৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে তাকে এলাকাভেদে ২০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে রাষ্ট্রীয় অথবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মৃত্যুর পর ১০ বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

দক্ষিণে সংরক্ষণের সুযোগ নেই বললেই চলে

ঢাকার মোট নয়টি কবরস্থানের মধ্যে তিনটি পড়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায়। এগুলো হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থান, জুরাইন কবরস্থান ও খিলগাঁও কবরস্থান।

এর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন ৩৫ একর আয়তনের আজিমপুর কবরস্থানে সংরক্ষিত কবরের জন্য বরাদ্দ তিন একর জায়গা অনেক আগেই পূরণ হয়ে গেছে। এখানে সংরক্ষিত কবর আছে ২ হাজার ৬০০টির মতো। এই কবরস্থানের পাশেই আড়াই একর জায়গা নিয়ে তৈরি আরেকটি কবরস্থানে সংরক্ষিত কবরের সংখ্যা ২ হাজার ৫০টি। এটি পরিচিত আজিমপুর নতুন কবরস্থান নামে।

সম্প্রতি আজিমপুর কবরস্থানে সাধারণ কবরের জন্য বরাদ্দ জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়, অনেক কবরের ওপর দুই, তিন এমনকি চারটি পর্যন্ত সাইনবোর্ড টানানো। অর্থাৎ একেকটি কবরে জায়গা হয়েছে দুই বা ততোধিক মানুষের। সাইনবোর্ডের লেখা থেকে জানা যায়, কবরের বাসিন্দারা ভিন্ন ভিন্ন এলাকার। ভিন্ন পরিবারের।

দক্ষিণ সিটির উপসমাজকল্যাণ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বিশেষ করে আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনের ব্যাপারে ঢাকার মানুষের আলাদা আগ্রহ আছে। তাই দেখা যায়, উত্তর সিটি থেকেও অনেকে এখানে আসেন কবরের জায়গার খোঁজে। তাই সবার জন্য কবরের জায়গা নিশ্চিত করার জন্য তারা কবরস্থানটির মূল অংশকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। একটি অংশে দুই বছর ধরে টানা কবর দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় অংশের কবরগুলো পুরোপুরি ভেঙে ফেলে নতুন কবরের জন্য জায়গা তৈরি করা হয়।

দক্ষিণ সিটিতে ১৮ একর আয়তনের জুরাইন কবরস্থানে সংরক্ষিত কবরের সংখ্যা ২ হাজার ৭০০টির মতো। আর খিলগাঁও কবরস্থানে শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কবর সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

তবে সংরক্ষণের জায়গা না থাকলেও সম্প্রতি এই খাতে কয়েক গুণ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি। গত বছরের ৭ জুলাই সংস্থার দ্বিতীয় বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সংস্থাটির মালিকানাধীন কবরস্থানে ১০ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। ১৫ বছরের জন্য দিতে হবে ১০ লাখ টাকা।

আগে ১০ বছরের জন্য ৩ লাখ এবং ১৫ বছরের জন্য ৬ লাখ টাকা দিতে হতো। এ ছাড়া ২০ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে হলে এখন থেকে ১৫ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ২০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। আগে ২০ বছরের জন্য ৯ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ১২ লাখ টাকা নির্ধারিত ছিল।

জায়গা না থাকার পরও ফি বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মেয়র বিশেষ বিবেচনায় কাউকে অনুমতি দিলে সাধারণ কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আর সংরক্ষণ নিরুৎসাহিত করতেই ফি বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত।

উত্তরে জায়গা বেশি, খরচও বেশি

উত্তর সিটির আওতাধীন কবরস্থানগুলো হচ্ছে রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান এবং মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান।

এই ছয়টি কবরস্থানের মধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান এবং বনানী কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ২৪ লাখ টাকা এবং ২৫ বছরের জন্য ৪৫ লাখ টাকা খরচ পড়বে।

এ ছাড়া উত্তরের বাকি চারটি কবরস্থানে কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ১৫ বছরের জন্য ৬ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ১১ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। যদিও রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন কবরস্থান বাদে অন্য পাঁচটি কবরস্থানে সংরক্ষিত কবরের জন্য জায়গা খুবই কম।

উত্তর সিটির সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উত্তর সিটির কবরস্থানগুলোতে মোট ৬৮টি কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়। এ ছাড়া আরও ২০টি আবেদন আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত বনানী এবং উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে স্থায়ীভাবে কবরের জন্য জায়গা কেনা যেত ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জায়গা কেনা যেত ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। এর পর কবরের জন্য স্থায়ীভাবে জায়গা কেনার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সাল থেকে চালু হয় বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

এদিকে দক্ষিণ সিটির উপ-সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান এ সংক্রান্ত পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে বলেন, সত্তর ও আশির দশকেও ঢাকায় এলাকাভেদে এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে কবরের জন্য স্থায়ীভাবে জায়গা কেনা যেত।

এ বিভাগের আরো খবর