প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে এবার রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০১ জন আইনজীবী, যাদের বেশির ভাগই বিএনপিপন্থি।
এর আগে ইসির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে দুই দফায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন ৪২ নাগরিক।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে নৈতিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি হারিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সুরাহা না হলে সাংবিধানিক এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও পদের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি।’
চিঠিতে আরও যেসব আইনজীবী স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে আছেন এস এম আমিনুল ইসলাম সানু, সৈয়দা আশিফা আশরাফি, মো. আক্তারুজ্জামান, মুজাহিদুল ইসলাম ও শিহাব উদ্দিন খান।
চিঠিতে ইসির বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ বাজেটের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিশনারদের গাড়ি ব্যবহার, ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে গুরুতর অনিয়ম, নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্লিপ্ততা ও ব্যর্থতা, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা ও বিশেষ বক্তা হিসেবে দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আবেদনে তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অভিনব কৌশলে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিজেরা লাভবান হওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান মতে, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত থেকে এসব গুরুতর অনৈতিক ও অর্থসংশ্লিষ্ট অসদাচরণ অভিশংসনযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ১১৮(৫) মতে, অনতিবিলম্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিপরায়ণ ও গুরুতর অসদাচরণে অভিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের অপসারণ প্রয়োজন।’
এ জন্য তদন্ত চলার সময়ে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রেখে একজন নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদানের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর এবং ১৭ জানুয়ারি দুই দফায় চিঠি দেন ৪২ নাগরিক।
এরপরই প্রশ্ন ওঠে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আছে কি নেই। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল-সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রিভিউ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে সর্বোচ্চ আদালতে। রিভিউ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান হবে।