চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক বেঞ্চ কর্মকর্তাসহ আরও দুজন।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চ অফিসার মাহবুব হোসেন এবং ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার আবু জাহিদ আনসারি।
আদালতে মাহবুব হোসেন জানান, দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন ব্যাংকে এসকে সিনহার আর্থিক লেনদেনের খোঁজখবর তিনি জানতেন।
এদিন দুদকের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মীর আহমেদ আলি সালাম; আসামি পক্ষে ছিলেন শাহীনুল ইসলাম।
এই মামলার মোট ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছেন আদালত।
মামলাটির মোট আসামি ১১ জন। এর মধ্যে কারাগারে থাকা ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতিকে আদালতে হাজির করা হয়।
আর জামিনে থাকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট প্রধান কাজী সালাহউদ্দিন, এমডি এবিএম শামীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন কুমার সাহা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলায় পলাতক চার আসামির মধ্যে এসকে সিনহা ছাড়া অপর তিনজন ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
গত ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে বাবুল চিশতীর নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এজাহারে থাকা আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক (গুলশান) মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ মারা যাওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই মামলাটি করেন। মামলা তদন্ত করে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ।
গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এস কে সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি অ্যাকাউন্ট খোলে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্বপরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাইবাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন দেন।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন করা হলে ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তড়িঘড়ি করে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করে এস কে সিনহার নামে।
৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়।
এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা ওই বছরের ২৮ নভেম্বরের হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়।