মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছেন রোহিঙ্গা কালু মাঝি। ওই দেশের আকিয়াব শহরের বাসিন্দা এখন থাকেন উখিয়ার জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পে।
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি পার্টির (এনএলডি) নেতা অং সান সু চির গ্রেপ্তারের খবরে উচ্ছ্বসিত ৫৫ বছরের এই রোহিঙ্গা।
তিনি বলেন, সু চি একজন নোবেল বিজয়ী নেত্রী। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করেছে। তারা ওই দেশের নাগরিক, এ বিষয়টি সু চি অস্বীকার করেছেন।
কালু বলেন, তার (সু চি) কারণে দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়েছে। তার উচিত শিক্ষা হয়েছে।
সু চির গ্রেপ্তারের খবরে বেশ খুশি ক্যাম্পবাসী রোহিঙ্গারা। চাকমারকুল ২১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আই-ব্লকের ফয়েজুল হক মনে করেন, সু চিকে আরও আগে ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত ছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তারও ধারণা, সু চির সহযোগিতায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গণহত্যা চালায়।
সু চির গ্রেপ্তারের খবর সোমবার সকালের হলেও টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের ইয়াকুব আলী মঙ্গলবার সকালে তা শোনেন। তিনি বলেন, সু চি ক্ষমতায় থাকলে তারা কখনও নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবেন না।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা নিউজবাংলাকে জানান, সু চি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তার মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন রোহিঙ্গারা। তিনিই রোহিঙ্গা গণহত্যার সময় নীরব ছিলেন। এ কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা।
তবে মিয়ানমার সেনাদের দখলে চলে যাওয়া ভালো সংবাদ নয় বলে মনে করছেন অনেকে। রোহিঙ্গা নেতা নুর বশর বলেন, এ বছরেও রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সু চির সরকার কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এদিকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে কক্সবাজারের সীমান্তে সব পয়েন্টে অনুপ্রবেশ ও বিশৃঙ্খলা রোধে কঠোর অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। ছবি: নিউজবাংলা
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আলী হায়দার আজাদ জানান, বাংলাদেশের সীমান্ত স্বাভাবিক আছে। মিয়ানমারের কেউ যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম।
বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রশাসনও তৎপর আছে বলে জানান তিনি।