বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই ছাত্রীকে ধর্ষণের ‘আলামত মেলেনি’, গ্রেপ্তার দুজন রিমান্ডে

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০২:২০

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জোরপূর্বক যৌন সঙ্গমের কোনো আলামত পাইনি। ধর্ষণ তো অনেক বড় জিনিস। তারপরও ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করেছি। কমপক্ষে এক মাস লাগবে রিপোর্ট পেতে। রিপোর্ট পেলে সব জানা যাবে। সুরতহালে বিষাক্ত মদের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। সে কারণে পরীক্ষার জন্য রক্তও নেওয়া হয়েছে।’

রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রী মারা গেছেন, ময়নতদন্তে তাকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির বাবার করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দুই জনকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, মোহাম্মদপুরে এক বান্ধবীর বাসায় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ওই ছাত্রী।

এ অভিযোগ এনে ওই ছাত্রীর বন্ধুসহ পাঁচ জনকে আসামি করে রোববার মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। এই মামলার আগেই মারা যান এক আসামি, যা গোপন ছিল।

ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার আগে তার বাবার করা ধর্ষণ মামলার চার আসামিই ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলার পাঁচ নম্বর আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় একজনকে।

আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মন সবুজ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি, তারা বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে মদ খেয়েছে। শনিবার অসুস্থ অবস্থায় আমাদের এখানে নিয়ে এসে ভর্তি করে। আজকে তিনি মারা গেছেন। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।’

মামলায় বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে আসামি করা দুই জনসহ উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় যান ওই ছাত্রী। সেখানে আরও দুই জন আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত মদ পান করানোয় ছাত্রী অসুস্থ বোধ করেন।

সেখান থেকে মোহাম্মদপুরে এক বান্ধবীর বাসায় যান তারা। সে বাসায় এক নম্বর আসামিও যান। রাতে তিনিই ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এরপর ওই বাসায় থাকা অবস্থায় একাধিক বার বমি করে অসুস্থ হন ওই ছাত্রী।

তালা ঝুলতে দেখা গেছে রেস্তোরাঁর সদর দরজায়

সোমবার দুপুরে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের ১২ তলার ওই রেস্তোরাঁর দরজায় দুটি তালা ঝুলতে দেখা যায়।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে রেস্তোরাঁর সুপারভাইজার মো. জনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই আমি ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আছি। আমি ওই দিন ছিলাম না। সবই শোনা কথা।

‘আমি কিছুই জানি না। আমি শুধু শুনেছি আমাদের এখানের স্টাফদের পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে জানি না। কিছু জানতে পারলে জানাব।’

রেস্তোরাঁটির উপরের তলার একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁটি খোলা দেখেছি। তারপরে কখন বন্ধ হয়েছে, তা আমি বলতে পারি না। তবে শুনেছি, কী একটা ঝামেলা হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তরার ওই রেস্তোরাঁয় দুই জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সেখান থেকে চলে যান। এরপর ওই ছাত্রীসহ তিন জন মোহাম্মদপুরের উদ্দেশে রওনা দেন উবারে। পথে একজন নেমে যান। এরপর তারা দুই জন ওঠেন মোহাম্মদপুরের ওই বান্ধবীর বাসায়। পথে তাদের যে বন্ধু নেমে যান তিনি শনিবার সিটি হাসপাতালে মারা যান। ধর্ষণ মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় ওই বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। ভবনের দারোয়ান নিউজবাংলাকে জানান, তারা ভালোভাবে বাসায় আসেন এবং ভালোভাবেই চলে যান।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ১২টার দিকে হ্যারা দুইজন আসছে। আসার পরে হ্যারা ফ্যালাটে গ্যাছে। এর পরে কী হইছে আমি জানি না। পরের দিন হ্যারা দুপুরের দিকে খাবার অর্ডার করে ফুড পান্ডায়।

‘আমি উপরে গিয়া দিয়া আসি। ওই দিন (শুক্রবার) হ্যারা বাসায় ছিল। শনিবার সকাল সকাল চইলা গেছে। আমি র‍্যাকে খ্যালতাছিলাম, তহন দেখছি সুস্থভাবেই হাঁইটা গ্যাছে তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্যালাটে আফায় একা থাহেন। মাঝেমাঝে হ্যার মা বেড়াতে আসেন। ইউনিভার্সিটির ধারে দেইকা হ্যায় এইহানে ফ্ল্যাট নিছে। পুলিশ আইসা সিসিটিভি ফুটেজ নিয়া গ্যাছে।’

এই বাসাতেই ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, সেখানেও ঝুলতে দেখা গেছে তালা

ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির মা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তার ছেলে ধর্ষণ করেছেন। তিনি মনে করেন, তার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে।

সোমবার রাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘টিভিটা ভয়ে ওপেন করতে পারি না। আমি আজকে দুই দিন হলো মাথা তুলে বসতে পারছি না। আমার শরীরের অবস্থা ভালো না। আমাদের পরিবারে এর আগে মামলা সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটে নাই। আমরা কিছুই জানি না।

‘তারা আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ২৮ তারিখ সন্ধ্যার সময় বের হইছিল। রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ছেলেকে ফোন দিছিলাম। সে বলে- আম্মু আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে ফোন দিব। তারপর ছেলের সঙ্গে আমাদের কারও কোনো কথা হয়নি।’

এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাদের মেয়ে এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকবে- এটা তারা কীভাবে মেনে নেয়? আমার ছেলেও একটা মায়ের ছেলে। সেই মেয়েটাও একটা মায়ের মেয়ে। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। আমার ছেলেমেয়ের কিছু হলে আমার যেমন খারাপ লাগে, তাদেরও খারাপ লাগছে।’

রোববারই ওই ছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা।

সোমবার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক যৌন সঙ্গমের কোনো আলামত পাইনি। ধর্ষণ তো অনেক বড় জিনিস। তারপরও ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করেছি। কমপক্ষে এক মাস লাগবে রিপোর্ট পেতে। রিপোর্ট পেলে সব জানা যাবে। সুরতহালে বিষাক্ত মদের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। সে কারণে পরীক্ষার জন্য রক্তও নেয়া হয়েছে।’

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তারা কোথায় ড্রিঙ্কস করছে, কোথায় ছিল- সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করেছি।

‘তাদের বাইরে আর কেউ সেখানে ছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় যাকে আসামি করা হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যে ছেলেটা আগেই মারা গেছে, তার পরিবার কোনো মামলা করে নাই।’

এ বিভাগের আরো খবর