বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কী ঘটেছিল গাজীপুরের সেই অবকাশ কেন্দ্রে

  •    
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২৩:৩০

গাজীপুরের সারাহ রিসোর্ট থেকে ফিরে মারা গেছেন বিজ্ঞাপনী সংস্থার তিন কর্মী। অন্তত আট জন অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মুখ খুলছেন না কেউ।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের পিআর প্রতিষ্ঠান ফোরথটপিআর ও ব্ল্যাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজির ৪৩ জন সহকর্মী অবকাশ যাপনের জন্য গিয়েছিলেন গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে। দুই রাত সেখানে অবস্থানের পর শনিবার তারা ঢাকা ফেরেন।

এর মধ্যে ঢাকায় ফিরে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিন জন। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন অন্তত আট জন।

তবে এতজন কর্মীর অবকাশ যাপনে যাওয়া, তিন জনের অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ও বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা নিয়ে এশিয়াটিকের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল কেউ কথা বলছেন না। মৃত্যু ও অসুস্থতা নিয়ে লুকোচুরি করছে এশিয়াটিক কর্তৃপক্ষ। ফলে জানা যাচ্ছে না, কী ঘটেছিল সেই রিসোর্টে, কেন অসুস্থ হলেন কর্মীরা।

সারাহ রিসোর্টে যাওয়া ফোরথটপিআর ও ব্ল্যাকবোর্ডের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন সহকর্মী সেখানে অবকাশ যাপনের জন্য যান। শুক্রবার রাতে সেখানে বারবিকিউ পার্টি হয়। অনেকেই সেখানে মদ পান করেন।

রাতের পার্টি ভালোভাবে শেষ হলেও শনিবার দুপুরে ঢাকায় ফেরার পর তিন জন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা হলেন ফোরথটপিআরের শিহাব জহির, ব্ল্যাকবোর্ডের মীর কাউছার ও শরীফ জামান।

শনিবার শিহাব জহিরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মীর কাউছারকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি মারা যান। সোমবার সকালে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান ব্ল্যাকবোর্ডের শরীফ জামান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন কর্মী জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সারাহ রিসোর্ট থেকে সবাই একসঙ্গে চেক আউট করে এক বাসে করে ঢাকায় ফেরেন। বাসে চড়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে শিহাব একটু অসুস্থ বোধ করছিলেন। মীর কাউছারের তেমন কোনো সমস্যার কথা সহকর্মীরা জানতে পারেননি। এ ছাড়া শরীফ জামানের ব্যাপারেও বাসে থাকা অবস্থায় কিছু জানা যায়নি।

ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে একেকজনকে নামিয়ে দেয়ার পর প্রথমে শিহাবের অসুস্থতার কথা জানা যায়। তাকে অসুস্থ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী আরও জানান, মীর কাউছার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। তিনিও বাসায় ফেরার পর অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মীর কাউছার মারা যান। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। তার মরদেহ সেখানে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার সকালে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান শরীফ জামান।

সারাহ রিসোর্ট গাজীপুর। ছবি ফেইসবুক থেকে নেয়া

সারাহ রিসোর্টের খাবারে কোনো সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেছে ওই প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের এখানে প্রায় দুইশ জন খাবার খেয়েছে। আমাদের রিসোর্টে আরও অনেকগুলো গ্রুপ ছিল। এশিয়াটিকের দুই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন বাদে আর কেউ অসুস্থ হওয়ার খবর আমরা পাইনি। আমাদের খাবার খেয়ে অসুস্থ হলে একই খাবারে অন্যেরাও অসুস্থ হতেন।’

রিসোর্টে মদের লাইসেন্স নেই বলে জানিয়েছেন ইসমাইল হোসেন। এ কারণে তাদের রিসোর্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে মদের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এশিয়াটিকের অফিস ম্যানেজমেন্ট থেকে মদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অবকাশ যাপনে যাওয়া কর্মীদের এক জন। তবে এই মদ কোথা থেকে আনা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি তিনি।

ওই কর্মী জানান, যারা ওই রাতে মদ পান করেছিলেন, তাদের অধিকাংশই অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। দুজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন।

রাজধানীর ল্যাবএইড, এভার কেয়ার, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শ্যামলীর ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, মহাখালীর ইউনিভার্সাল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত আট জন ভর্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মী।

অবকাশ যাপনে যাওয়া কর্মীদের ধারণা, মদের মধ্যে হয়ত ভেজাল ছিল। যে কারণে যারা মদ পান করেছে, তারা প্রায় সবাই অসুস্থ হয়েছেন।

গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে কী ঘটেছিল, এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলছেন না এশিয়াটিক ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

সোমবার দুপুরে বনানীতে এশিয়াটিক সেন্টারে গিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ভবনের নিচে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, অফিসে লোকজন নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইরেশ যাকের দুপুরে অফিসে এসেছিলেন। কিছুক্ষণ থেকে তিনিও বেরিয়ে যান।

ইরেশ যাকেরের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এশিয়াটিকের আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মাইন্ডশেয়ারের অফিসে গিয়েও কারো সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন শাখা থেকে একজনের নম্বার দেয়া হয়। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক মন খারাপ অবস্থায় আছি। আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেটমেন্ট দিব।’

মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শিহাব জহিরের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিহাবের ময়নাতদন্ত হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

শিহাব জহিরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছেন সেলিম রেজা।

তবে থানা পুলিশ এই মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু জানে না। শেরে বাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি নিউজবাংলাকে জানান, তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, সারাহ রিসোর্টে বারের কোনো লাইসেন্স নেই। ফলে অতিথিদের মদ সরবরাহ করা হলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। আর যদি বাইরে কোনো বার থেকে মদ আনা হয়ে থাকে, তাহলে লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া কীভাবে তারা তা বিক্রি করেছে, সে ব্যাপারে তদন্ত হবে।

মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা গেলে মদের মধ্যে ভেজাল ছিল কিনা, অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘সবার আগে জানতে হবে এই মদ তারা কোথা থেকে নিয়েছে।’

দেশে অ্যালকোহলের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই বলে জানা গেছে।

রাজধানীর একাধিক বারগুলোর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সম্প্রতি এই সংকট দেখা দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিদেশী অ্যালকোহল আমদানিতে শুল্কের কড়াকড়িকে দায়ি করছেন তারা।

রাজধানীর গ্রিনরোডের ডিপিএল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে তাদের পার্সেল সেবা বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ সংকটের কারণে শুধু বারের ভিতরে অ্যালকোহল পরিবেশন করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর