ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে একটি মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তারা হলেন জালিস মাহমুদ ও অমল জয়ধর।
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এদিন ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের একটি টিম।
এ সময় ১০ লাখ টাকা, ৭১টি পাসপোর্ট, মালয়েশিয়ার ১১টি জাল ভিসা, ফ্রান্সের তিনটি জাল ভিসা, বিএমইটি ভুয়া ছাড়পত্রের ২৪টি ফটোকপি, আটটি ভুয়া মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ও বিমানের ১০টি ভুয়া টিকিট জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, এস এম এন্টারপ্রাইজ নামে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনা করে প্রতারণায় জড়িত থাকায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জালিস মাহমুদ ও ফিল্ড অফিসার অমল জয়ধরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রিপন মাহমুদকে ধরতে অভিযান চলছে। বনানীতে প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা রুম থাকলেও নেই কোনো কর্মী। সবাই পালিয়েছে।
তিনি বলেন, রিক্রুটিং লাইসেন্স না থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল এস এম এন্টারপ্রাইজ।
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ওমর ফারুক বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে চক্রটি ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রায় ২৫ জন ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দিয়েছে।
তিনি জানান, চক্রটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক স্বল্পশিক্ষিত লোকদের টার্গেট করে ভুয়া ওয়েবসাইটে ভিসা যাচাইপ্রক্রিয়া দেখাত। তৈরি করত জাল টিকিট, ভিসা ও বিএমইটির কার্ড। তাদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে। বিএমইটি কার্ড জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কিছু ঘটনা ২০১৯ সালে হলেও ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি মামলা করেন কেন, জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এজেন্সিকে টাকা দিয়ে তা ফেরত নিতে বারবার যোগাযোগ করা হয়। বারবারই তারা সময় নেয়। ভুক্তভোগীরা স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় আইনগতভাবে কীভাবে মোকাবিলা করবে, সে সাহস পাচ্ছিলেন না। সম্প্রতি কিছু মানব পাচারকারী গ্রেপ্তারের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তারা আইনগত ব্যবস্থা নেন। এ ধরনের প্রতারণায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবেই।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ভাগ্য বদলে মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে নিজেদের সম্পদ বিক্রি করেন তারা। বিমানবন্দরের যাওয়ার পর বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে এসএম এন্টারপ্রাইজে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত চান। তারা বারবার সময় নিলেও টাকা দেয়নি। বিভিন্ন সময় রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।