বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিষাক্ত মদ’ পানের পর ছয়জনের মৃত্যু

  •    
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:২৩

‘এটা ভালো মাল (মদ) খুব নেশা হবে। খাওয়ার পর বুঝতে পারছি, এটা ভয়ংকর। তবে অন্য দিন একই দোকান থেকে মাল কিনে খেয়েছি, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। গত শনিবার খেয়েই সমস্যা হলো।’

বগুড়ায় নেশা করতে রেকটিফাইড অ্যালকোহল পানের পর ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

যদিও পুলিশ বলছে, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এই বিষাক্ত মদ পানের পর পর। আর বাকিরা স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

মৃত ব্যক্তিদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের নিশ্চিত করা তিনজন বাদে অন্যরাও স্পিরিট পান করেছিলেন।

যারা মারা গেছেন, তারা হলেন বগুড়া তিনমাথা এলাকার রমজান আলী ও সুমন রবিদাস, ফুলবাড়ী এলাকার পলাশ মিয়া, আব্দুর রহিম, কাটনারপাড়ার সাজু ও মোজাহার আলী।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সুমন রবিদাসের বাবা প্রেমনাথ, তার চাচা রামনাথ, পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল, পায়েলের বন্ধু আইয়ুব, শিববাটি এলাকার হোটেলশ্রমিক রঞ্জু।

হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, বগুড়ার ফুলবাড়ী এলাকার পলাশ মিয়াকে সোমবার রাত ১১টার দিকে মেডিক্যালে নেওয়ার পর মারা যান।

পলাশের ভাই পায়েল ও তার বন্ধু আইয়ুব বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালে ভর্তি।

তারা পারুল ল্যাব নামক একটি দোকান থেকে ‘রেকটিফাইড অ্যালকোহল’ কিনে নিয়ে একজনের কাছ থেকে। গত শনিবার সন্ধ্যায় খাওয়ার পর তিনজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পায়েলের স্ত্রী জানান, শনিবার তাদের পরিবারের একজনের জন্মদিন ছিল। এ কারণে তার স্বামী, দেবর ও দেবরের বন্ধু শখ করে মদ খান। সোমবার হাসপাতালে নেওয়ার পর পলাশ মারা যান। পায়েল ও আইয়ুব চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালেই পলাশের ভাগনে বাধন জানান, জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওই সন্ধ্যায় তার মামার সঙ্গে আব্দুর রহিম নামের আরেকজনও মদ পান করেন। পরে তিনি তার বাড়ি ফুলবাড়ী দক্ষিণ পাড়ায় রোববার মারা যান।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আইয়ুব জানান, শহরের মধ্যে পারুল ল্যাব নামক একটি দোকানের কর্মচারী রুস্তমের কাছ থেকে শনিবার তিনি ‘রেকটিফাইড অ্যালকোহল’ কেনেন।

তিনি বলেন, ‘এটা ভালো মাল (মদ) খুব নেশা হবে। খাওয়ার পর বুঝতে পারছি, এটা ভয়ংকর। তবে অন্য দিন একই দোকান থেকে মাল কিনে খেয়েছি, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। শনিবার খেয়েই সমস্যা হলো।’

হাসপাতালে ভর্তি শিববাটি এলাকার হোটেলশ্রমিক রঞ্জু। তিনি বলেন, ‘পারুল ল্যাব থেকে প্রতিদিন কিনে খাই। অন্য দিন কোনো সমস্যায় পড়িনি। শনিবার কিনে খাওয়ার পরেও কোনো সমস্যা হয়নি। রোববার সকালে সমস্যা শুরু হয়। এরপর সোমবার সাজুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আমি নিজে এসে হাসপাতালে ভর্তি হই।’

নিহত সুমন রবিদাসের ভাই সুজন রবিদাস বলেন, ‘রমজান তাদের এলাকার বাসিন্দা। তারা শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় শাহীন হোমিও নামের একটি দোকান থেকে স্পিরিট কিনে খান। এটা খেয়েই রমজান অসুস্থ হয়ে তার নিজ বাড়িতে মারা যান।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানও নিশ্চিত হতে পারিনি যে মদপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে রমজান ও সুমন রবিদাস বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। তারা মদ পান করতে পারেন।’

ওসি হুমায়ুন বলেন, ‌‘সাজু স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন তিনি মদপান করেছিলেন। আর মোজাহার বৃদ্ধ মানুষ। তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাতে হাঁসের মাংস খেয়েছিলেন মোজাহার। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে নিজ বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’

পারুল হোমিও ল্যাব ও শাহীন হোমিও হলের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘ওই দুটি দোকান সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মামলাও প্রক্রিয়াধীন।’

জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য বলছে, তিনজন বিষাক্ত মদ পান করে মারা গেছেন। তারা হলেন সুমন রবিদাস, পলাশ ও সাজু। অন্যরা স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মৃতদের মধ্যে সুমন রবিদাস বিষাক্ত মদ খেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। অন্যদের বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কয়েকজন। অন্যরা কীভাবে মারা গেছেন, তা জানা নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর