ইসলামবিরোধী আখ্যা করে রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করা দলের ছাত্রসংগঠন ভাস্কর্যের পাদদেশেই দিল দাবিনামা।
সোমবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘হিজাব দিবসের’ নানা দাবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড সাঁটিয়ে যায় ইসলামী আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
সোমবারকে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস ২০২১’ উল্লেখ করে সংগঠনটি তাদের সাত দফা দাবিনামার প্ল্যাকার্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এবং টিএসসির সামনে বসাতে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম বাধা দেয়।
পরে সেটি তারা সেখানেই রেখে চলে এলে বিকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেটি ছিঁড়ে ফেলে৷
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাদের বাধা দিতে গেলে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা-কর্মী মারধরের শিকার হন।
ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে সেই স্থাপনার পাদদেশেই প্ল্যাকার্ড বসানোকে ‘রাজনৈতিক দ্বিচারিতা’ বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত আদর্শের ঝান্ডা ধরে তারা যদি ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়, সেটা পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাসে কোনো ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে সাদ্দাম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী রাজনীতি করার সুযোগ এখানে নেই। এটি যদি কেউ করার চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেটি বরদাশত করবে না।’
রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে গত নভেম্বরে প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনে। তাদের দাবি, ইসলাম ভাস্কর্য অনুমোদন করে না।
ইসলামী শাসতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাকার্ডটি ছিড়ে ফেলেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
সে সময় ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া ছাড়াও আরও নানা হুমকিধমকি আসে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে। শুরুতে চুপ থাকলেও ডিসেম্বরে মাঠে নামে সরকার-সমর্থক সংগঠনগুলো। এরপর আক্রমণাত্মক বক্তব্য থামায় ধর্মভিত্তিক দলগুলো।
ডিসেম্বরের শুরুতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাটি আগুনে ঘি ঢালে। এরপর হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হয় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কওমি আলেমদের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। পরে মন্ত্রী জানান, এই দলগুলো এই ইস্যুতে আর মাঠে নামবে না।
ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে সেই ভাস্কর্যর পাদদেশে দাবিনামা দেওয়ার বিষয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিকালে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থানের সময় তাদের বক্তব্য নিতে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চড়াও হলে কোনো কথা না বলে চলে যান ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
বিপরীতধর্মী দাবি
সংগঠনটি প্ল্যাকার্ডে যেসব দাবি জানিয়েছে, তার মধ্যে আছে, শিক্ষা, চাকরি, কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য হিজাব পরিধানের শর্তহীন অধিকার নিশ্চিত করা; বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দেশের সব প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোডে হিজাবকেও যুক্ত করা; ক্লাস প্রেজেন্টেশন ও ভাইবায় হিজাবকে ফরমাল পোশাক হিসেবে গণ্য করা, প্রভৃতি।
হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে আবার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
এ ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য এমন, ‘হিজাব পরিধান করার কারণে নারীর সাথে কোনোরূপ বৈষম্যমূলক আচরণ ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক আইন পাস করতে হবে।’
কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করা আবার কারও পোশাক পরার স্বাধীনতা- দুটি বিপরীতধর্মী দাবি কীভাবে একই সঙ্গে তোলা হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য দেওয়া হয়নি।