অং সান সু চিসহ ক্ষমতাসীন এনএলডির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করায় হঠাৎ টালমাটাল মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এসবে সতর্ক নজর রাখছে বাংলাদেশ।
গত নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরের দিকে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও এনএলডির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী। জারি করা হয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা।
নেপিদোর এই পরিস্থিতি ঢাকা পর্যবেক্ষণে রাখছে বলে জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। জানান, এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
সোমবার সকালে নিউজবাংলাকে টেলিফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাস করে। আমরা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। মিয়ানমারের পুরো ঘটনায় নজর রাখা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি দেবে।’
এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তা পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এতে কোনো অনিশ্চয়তা দেখছি না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। বাংলাদেশ আশা করে রোহিঙ্গারা আগেভাগেই ফিরে যাবে।’
সেনাদের হাতে সু চিদের গ্রেপ্তারের পর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। কড়া বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অনেক দেশ।
থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে মিয়ানমারে। রাজধানী নেপিদোসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। পরিস্থিতি থমথমে।
বড় বড় শহরগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেট ড্যাটা ও আরও কিছু সেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি থেকে বলা হয়েছে, কারিগরিগত গোলোযোগের কারণে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত নভেম্বরের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন নিয়েই এনএলডি ও দেশটির সামরিক বাহিনীর মধ্যে বৈরিতা চরমে পৌঁছে। নির্বাচনে এনএলডি সরকার গঠনের মতো আসন পেলেও জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নতুন করে নির্বাচিত সদস্যরা প্রথমবারের মতো সোমবার অধিবেশনের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে আসছিল সেনাবাহিনী।
এনএলডির মুখপাত্র মায়ো নিন্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফোনে বলেছেন, ভোরের দিকে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও আরও কয়েকজন নেতাকে ‘ধরে নিয়ে যাওয়া’ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের জনগণকে বলতে চাই, তারা যেন, তাড়াহুড়া করে প্রতিক্রিয়া না দেখান। আমি চাই তারা আইন অনুযায়ী কাজ করুক।’
সেনাদেরকে বিভিন্ন অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের বাসস্থানের সামনেও টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।
মিয়ানমার ২০১১ সাল পর্যন্তই সামরিক শাসনের মধ্যে ছিল। বেশির ভাগ সময়েই বন্দি অবস্থায় ছিলেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেতা সু চি।