রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী রোববার মারা গেছেন।
তার পরিবারের অভিযোগ, মোহাম্মদপুরে এক বান্ধবীর বাসায় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। এ অভিযোগ এনে ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুসহ চারজনকে আসামি করে রোববার মোহাম্মদপুর থানায় মামলাও করে পরিবারটি। এই মামলার আগেই মারা যান এক আসামি, যা গোপন ছিল।
রোববার সকালে ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার আগেই তার বাবার করা মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মন সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি, তারা বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে মদ খেয়েছে। শনিবার অসুস্থ অবস্থায় আমাদের এখানে নিয়ে এসে ভর্তি করে। আজকে তিনি মারা গেছেন। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’
মামলায় বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে আসামি করা দুই জনসহ উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে যায় ওই শিক্ষার্থী। সেখানে আরও দুই জন আগে থেকেই অবস্থান করছিল।
রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত মদ পান করানোয় শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করেন। সেখান থেকে মোহাম্মদপুরে এক বান্ধবীর বাসায় যান তারা। সে বাসায় এক নম্বর আসামিও যান। রাতে তার দ্বারাই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হন। এরপর ওই বাসায় থাকা অবস্থায় একাধিকবার বমি করে অসুস্থ হন ওই ছাত্রী। এ অবস্থায় পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতাল ও পরে আনোয়ার খান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয় তাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন অর রশীদ রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, মেয়ের বাবা থানায় ধর্ষণের মামলা করেছেন চার জনের নামে। এর মধ্যে যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ছাত্রীকে মোহাম্মাদপুরে যে মেয়ের বাসায় নেয়া হয়েছিল তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) তারা চার বন্ধু-বান্ধব মিলে উত্তরায় একটি রেস্টুরেন্টে মদ পান করেন। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে সেখান থেকে চলে যান। একজন শনিবার মারা গেছেন সিটি হাসপাতালে। এর আগে তারা তিনজন একটা উবারে করে মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় যান।
ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির সঙ্গে মেয়েটির পূর্ব সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় তাদের মধ্যে ‘অবাধ মেলামেশা’ হয়। এক পর্যায়ে মেয়েটি প্রচুর বমি করে। এ কারণে তাকে ইবনে সিনায় ভর্তি করা হয়। তবে ইবনে সিনা মেয়েটিকে রাখেনি। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে। সেখানে রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়।
ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, মেয়েটি মারা যাওয়ার আগেই তার বাবা ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় আরেকজন যাকে আসামি করা হয়েছে তিনি গত শনিবারই মারা গেছেন।
যে রেস্টুরেস্টে বসে তারা মদ পান করেছিলেন, তাদের লাইসেন্স আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ডিসি হারুন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অতিরিক্ত মদ পান ও ওই মদে কোনো বিষাক্ত কিছু ছিল- সে কারণে এবং ওই বাসায় ‘ধর্ষণজনিত যে ঘটনাটি ঘটেছে’- সব মিলে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
মদে কেউ বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল কি না সে তদন্তও চলছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন জানান, ওই রেস্টুরেন্টে বিমানবন্দর থেকে মদ এনেছিলেন তাদের এক বন্ধু। তিনি পলাতক রয়েছেন। সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মেয়েটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মোহাম্মদপুরের বাসায় তাদের ‘মেলামেশার’ কথা গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন। ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
তারা চার জনই ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থী বলেও জানান তিনি।