নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ফলাফলের প্রিন্ট কপি দিতে না পারলে এই মামলা করবেন তিনি।
গত ২৭ ডিসেম্বরের ভোটে বিপুল ব্যবধানে পরাজয়ের চার দিন পর রোববার চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শাহাদাত। তার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ভোট বেশি দেখিয়েছে, তার পক্ষের ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা ইভিএমের বোতাম টিপেছে।
লিখিত বক্তব্যে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ‘ইভিএমে ভোটের ফলাফল দেয়ার কথা প্রিন্টেড কাগজে। কিন্তু তা না দিয়ে হাতে লেখা কাগজে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখের ইভিএমের ফলাফল প্রিন্ট করা কাগজ দিতে না পারলে কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে হবে।’
শাহাদাত বলেন, ‘৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে শুধু এ ধরনের প্রিন্ট করা কাগজ দেয়া হয়েছে। অন্যগুলোতে দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে লেখা ফলাফল।’
শাহাদাতের অভিযোগ, নির্বাচনে সাড়ে সাত শতাংশ ভোট পড়লেও কারচুপি করে সাড়ে ২২ শতাংশ দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এমন অভিযোগ আনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন তিনি সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ১৫টি কেন্দ্রের ২৬০টি বুথে গিয়েছিলেন। পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি বলে তার ধারণা।
তিনি জানান, প্রতি ঘণ্টায় কত ভোট পড়েছে, সেই হার তিনি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে বলেছেন, সেটা দেয়া যাবে না।
রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ভোট পেয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজার ২৪৮।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের ধানের শীষে ভোট পড়ে সাত ভাগের একভাগ মাত্র। তিনি ভোট পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৭৯ ভোট।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গঠনের পর ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেল আওয়ামী লীগ। আর এবারের নির্বাচনেই ভোটের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের তুলনায় বিজয়ী নৌকার ভোটের ব্যবধান হয়েছে অস্বাভাবিক বেশি। ধানের শীষের ৭.২২ গুণ ভোট পেয়েছে নৌকা।
যত বৈধ হয়েছে, তার ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটই পড়েছে নৌকায়।
শাহাদাত বলেন, ‘বহিরাগতরা অনেক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহায়তায় ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেরাই ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপে নৌকার ভোট নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি অনেক কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার পর ব্যালেট প্যানেলে নৌকার প্রতীকে নিজেরাই চাপ দিয়ে দেয়।’
বিএনপির ওই প্রার্থী জানান, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে এক বছর আগে উপ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক ডিউক পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার ভোট দেখানো হয়েছে ৩৩৪টি।
একইভাবে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইয়াছিন চৌধুরী আশু, মোহরা ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের ইসমাইল বালিসহ অনেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। তাদের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০।
পুনর্নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে শাহাদাত বলেন, কিছু দিন আগে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কমিশনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন এবং বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এর যৌক্তিকতার প্রমাণ নির্বাচন কমিশনই দিয়েছে।