বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসি নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে নাগরিকদের আবার চিঠি

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:১৯

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতিকে প্রথমে চিঠি দেয়া হয় গত ১৪ ডিসেম্বর। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে বঙ্গভবন থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দেড় মাস পর গেল দ্বিতীয় চিঠি।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচারণের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে দ্বিতীয়বারের মতো চিঠি দিয়েছেন ৪২ নাগরিকরা।

এবারের চিঠির সঙ্গে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাত পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়েছে।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ দীন মালিকের সই করা চিঠিটি বঙ্গভবনে পাঠানো হয়।

এই চিঠিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও চেয়েছেন ৪২ নাগরিক। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমাদের অভিযোগের বিষয়ে সামনাসামনি ভাবে অবগত করার জন্য আপনার সুবিধামতো সময়ে সাক্ষাতের অনুরোধের বিষয়ে আমরা আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি তোলার কারণ ব্যাখ্যা করে চিঠিতে বলা হয়, তারা কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন সেগুলো প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ক্ষমতা সংবিধান বা কোনো আইন তাদের ওপর ন্যস্ত করেনি।

অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, রেকর্ড ও দলিল, প্রদেয় অর্থ ও অর্থ গ্রহণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল লিখিত প্রমাণ নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তলব করতে পারে একমাত্র সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

তবে বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, এখনও তারা চিঠি পাননি।

নিউজবাংলাকে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত বঙ্গভবনে কোনো চিঠি দেয়া হলে সেটি প্রথমে মূল ফটকে জমা হয়। তারপর ডেসপাস রাখার মাধ্যমে বঙ্গভবনের ভেতরে পাঠানো হয়। সে ক্ষেত্রে চিঠি এলে আগামীকাল বঙ্গভবনের ভেতরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর একই দাবিতে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয় বঙ্গভবনে। তবে রাষ্ট্রপতি তাদের দাবির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা

২০১৭ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয় এই কমিশন। আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের দায়িত্বে থাকার কথা।

এই কমিশনের অধীনেই হয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচন, যে ভোট নিয়ে বিরোধীদের প্রবল আপত্তি আছে। জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও নানা অভিযোগ করছে বিরোধীরা।

এই বিষয়গুলো ছাড়াও আগের চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, আইনবিরুদ্ধ কাজ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারার অভিযোগ আনা হয়।

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তারা নিরপেক্ষভাব কাজ করছেন। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার হতাশা প্রকাশ করে সেটিকে ‘অনিয়মের মডেল’ বলেছেন।

এই চিঠি দেয়ার পর ২৮ ডিসেম্বর, ১৬ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি তিন দফায় পৌরসভায় ও ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হয়।

এর মধ্যে প্রথম দুই ধাপের পৌর নির্বাচনে বহুদিন পর কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। একাধিক পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী নির্বাচনের প্রশংসা করেন।

তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগের মতোই ভোটারের খরা দেখা গেছে। সেই সঙ্গে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের বাধা দেয়া, ৭৫টি কেন্দ্রে একটি করে এবং একটি কেন্দ্রে বিএনপির কোনো ভোট না পাওয়ার ঘটনায় আবার সমালোচনা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যাচেছ। আবার অনিয়মের অভিযোগও আছে

তৃতীয় দফা পৌর নির্বাচনেও বেশ কিছু এলাকায় নানা সংঘাত, সহিংসতা, জাল ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘটনা ঘটে। ফেনী পৌরসভায় অভাবনীয় একটি ঘটনা ঘটেছে। সেখানে নয়টি কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী শূন্য ভোট পেয়েছেন।

দ্বিতীয় চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়েছে, ‘আমরা কয়েকজন নাগরিক গত ১৪ ডিসেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সবিনয় আবেদন জানাই। আমাদের অভিযোগের সপক্ষে অতিরিক্ত কিছু তথ্য আপনার দৃষ্টিগোচর করার জন্য আবারও এই আবেদন।’

আবেদনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাত পর্বের প্রবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৮-১৯ সালে অল্প কিছু কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ বাজেটের অন্তত ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে মধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধানসহ ১৮ জন কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা, কোর্স পরিচালক, কোর্স সমন্বয়ক, সহকারী সমন্বয়কসহ বিতর্কিত ১৫টি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চারজন কমিশনার, সচিব ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকসহ কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে অন্যায় ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে এটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কমিশনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এটিকে স্বেচ্ছাচারিতামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে নয়, কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অভিনব কৌশলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার জন্য নয়, বরং নিরপেক্ষভাবে জনকল্যাণে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং প্রশিক্ষণ প্রদান তাঁদের রুটিন দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য তারা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই নিজেদের দাপ্তরিক পদবীর বাইরে নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে সাংবিধানিক স্বাধীনতার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা প্রশিক্ষণের নামে ভাগাভাগি করে নেওয়া দুর্নীতিমূলক চরম গর্হিত কাজ, যা সম্পর্কে অডিট আপত্তি উঠেছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর একই কাজের জন্য দুইবার সুযোগ-সুবিধা নেওয়া আইনের ভাষায় ‘ডাবল ডিপিং’, যা অন্যায়, অনৈতিক ও গুরুতর অর্থসংশিষ্ট অসদাচারণ।

এই চিঠির বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগেরবার মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে চিঠি দিয়েছিলাম, আজকের চিঠি তারই ধারাবাহিক ও বর্ধিত সংযোজন। এবারের চিঠিতে আমারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ দিয়েছি। আমরা আশা করি, এবার এইসব প্রমাণ আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ব্যবস্থা নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’

৪২ নাগরিক কারা?

গত ১০ ডিসেম্বর যারা চিঠি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, আকবর আলি খান ও সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, কামাল হোসেনের স্ত্রী হামিদা হোসেন, কামাল হোসেনের মেয়ে সারা হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম ও আহসান এইচ মনসুর, এনজিও কর্মী বদিউল আলম মজুমদার, রাশেদা কে চৌধুরী, খুশী কবীর, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী শাদহীন মালিক, বামপন্থি রাজনীতিক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আলোকচিত্রি শহীদুল আলম।

নির্বাচন কমিশন কী বলেছে?

এই চিঠি দেয়ার পরদিন নির্বাচন কমিশনার শাদাহাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, ৪২ নাগরিকের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। তারা সে সুযোগ না পেয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

সেদিন তিনি বলেন, ‘আমার বিবেচনায় (বিশিষ্টজনদের মধ্যে) যারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আছেন, তারা এই নির্বাচন কমিশনে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। সেই ব্যবসার সুযোগ হয়ত এই নির্বাচন কমিশনের আমলে হয়নি। তাই তারা ক্ষুব্ধ হতেই পারেন।’

অবশ্য চিঠিতে সই করা বদিউল আলম মজুমদার একে ছেলেমি বলে আখ্যা দেন। নিউজবাংলাকে এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটা ইসির পুরোনো কৌশল। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, ঢাল হিসেবে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণের কৌশলটা তাদের অনেক পুরনো।

‘আসলে এটা শুনে আমি লজ্জিত হয়েছি। এটা তো ছেলেমির বিষয়! এটা ভাবতেও অবিশ্বাস্য লাগে। সত্যিই কল্পনা আনাও দুরূহ। ওনার মতো একজন কমিশনার এতটা ছেলেমি করবেন, তা ভাবাও যায় না।’

এরপর ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি তাদের বিরুদ্ধে নানা সব অভিযোগকে উড়িয়ে দেন।

সিইসি তার বক্তব্যে সবগুলো অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, প্রশিক্ষণ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ১৫ বিশেষ বক্তার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দই ছিল না। সম্পূর্ণ অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, তারা যে গাড়ি ব্যবহার করেন, সেটা একেবারেই সাধারণ মানের।

ইভিএম কেনায় অস্বচ্ছতার অভিযোগের জবাব দিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম কেনায় সরাসরি নির্বাচন কমিশন যুক্ত নয়। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই যন্ত্র আমদানি করা হয়। টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে সেনাবাহিনীকে পরিশোধ করা হয়।

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অসদাচরণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাকেও অসত্য বলেন সিইসি। তার দাবি, নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যম কোনো অভিযোগ তোলেনি।

এ বিভাগের আরো খবর