২৯ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে কাজ শেষে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকার বাসায় ফিরতে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পুবপাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় তার সামনে। চালক বলেন, গাড়িতে আরও যাত্রী আছেন, যারা ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে তিনিও চাইলে যেতে পারেন।
সরল মনে মাইক্রোবাসে চড়ে বসেন আনোয়ার।
কিছু দূর গিয়ে গাড়ি অজানা গন্তব্যে ছুটলে আনোয়ারুল আবিষ্কার করেন, বিপদে পড়েছেন তিনি। গাড়িতে থাকা যাত্রীবেশী পাঁচ জনই অপহরণ চক্রের সদস্য। জিম্মি হন আনোয়ারুল।
সে রাতে ছাড়া পেতে অপহরণকারীদের কথামতো আনোয়ারুল তার পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে বেশ কয়েকটি বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আনান। সেই টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে ছাড়া পান আনোয়ারুল। পরদিন এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন আনোয়ারুল।
মামলাটি তদন্ত করে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখানের চেয়ারম্যানপাড়া এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ পেশাদার অপহরণ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সাদেকুল ইসলাম, মো. ইফরান, মোহাম্মদ আলী রিফাত, মো. কুতুব উদ্দিন, মো. মাছুম রানা ও গোলাম রাব্বি।
এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, একটি ছুরি, একটি মোটরসাইকেল ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব ও বিমান বন্দর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত এমন অপরাধ করে বেড়াচ্ছিলেন।
কিছুদিন আগে উত্তরায় একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে অপহরণ চক্রটির সন্ধান পায় পুলিশ। চক্রটি রাজধানীতে গত কয়েক দিনে চারজনকে অপহরণ করেছে। তাদের একজন আরোয়ারুল। তবে আনোয়ারুল ছাড়া অন্য কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি।
এই অভিযানের পর বাকি তিন ভিকটিমও তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন, বলেন হাফিজ আক্তার।
ভিকটিমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, অপহরণকারীরা অপহরণের পর এই চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি তুলে রাখতেন, যাতে ভিকটিম মুখ খুলতে না পারেন। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে ভিকটিমরা চুপ থেকেছেন।