লেখক ও কবি হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক চলছে। আগামী ৪ মার্চ এ মামলায় আরো যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আবার তারিখ রেখেছে আদালত।
৩১ জানুয়ারি রোববার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে বেলা সাড়ে ১২টায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হন হুমায়ুন আজাদ। তিনি ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর ২০০৪ সালের আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছরের ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
রোববার আদালতে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি আদালতকে বলেন, ‘ড. হুমায়ুন আজাদের চিকিৎসা সনদ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া তার (হুমায়ুন আজাদ) পরিবারের সদস্যরা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দেননি।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, আসামিদের ব্যবহৃত ‘চাপাতি’ (ধারালো ছোরা) উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সেটা যে তারা ব্যবহার করেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ সময় তার সঙ্গে আইনজীবী এম নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) সাইফুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি আসামিদের বিপথগামী জঙ্গি সদস্য আখ্যা দিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
আদালত পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আবার তারিখ রাখেন।
হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পরের দিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলা তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার আসামিরা হলেন: জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে মিনহাজ এবং আনোয়ার কারাগারে আছেন। সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ পলাতক। হাফিজ মারা গেছেন।
২০০৪ সালের আগস্ট মাসে মিউনিখে যাওয়ার সময় ঢাকার তখনকার ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে’ হুমায়ুন আজাদ বিমানের বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন ডেস্কে ঢোকার আগ মুহূর্তে জামাতের তিন শীর্ষ নেতাকে সেখানে দেখা যায়।
তার হলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সমাজ কল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
এই তিন জনের মধ্যে থেকে সাঈদী হুমায়ুন আজাদ যে বিমানে চড়ে মিউনিখে যাচ্ছিলেন সেটির উড্ডয়ন ও গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়, কোনো ট্রানজিট আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে খবর নিয়েছেন। বিমানটি মিউনিখের উদ্দেশে ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তারা বিমানবন্দরে অবস্থান করেন।
এসব বিষয় তখন পত্রপত্রিকাসহ গণমাধ্যমে আলোচনায় এলেও জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকার ফলে নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি।