বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাপুলের সাজা লজ্জার, পাশে থাকবে দেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  •    
  • ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ ২০:৫২

‘আমাদের একজন প্রবাসী যখন বিদেশে সম্মানিত হন, নিউইয়র্কে যখন একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার মেয়রের কাছ থেকে সততার জন্য সম্মানিত হন, তখন আমাদের বুকটা গর্ভে ফুলে ওঠে। তেমনি কেউ ক্রিমিনাল কেসে জড়ালে আমাদের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জার।’

কুয়েতে মানবপাচারের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম পাপুলের কারাদণ্ডের ঘটনাটি দেশের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবুল মোমেন। নাগরিক হিসেবে তাকে সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা করার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

এই বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কিছু জানায়নি জানিয়ে মোমেন বলেন, তারা বক্তব্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত জুনে কুয়েতে আটক পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড ও ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫৩ কোটি টাকারও বেশি।

বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণার দুই দিন পর শনিবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই দুঃখজনক, খুবই দুঃখজনক। এটা লজ্জাজনক।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একজন প্রবাসী যখন বিদেশে সম্মানিত হন, নিউইয়র্কে যখন একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার মেয়রের কাছ থেকে সততার জন্য সম্মানিত হন, তখন আমাদের বুকটা গর্ভে ফুলে ওঠে। তেমনি কেউ ক্রিমিনাল কেসে জড়ালে আমাদের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জার।’

আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের অপেক্ষা

পাপুলকে গ্রেপ্তারের মতো তার সাজার বিষয়টিও কুয়েত সরকার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।

মন্ত্রী বলেন, ‘সাত মাস আগের ঘটনা হলেও সেই দেশের সরকার আমাদেরকে কখনও কোনোভাবেই অফিশিয়ালি কিছু বলেনি, কিছুই বলেনি।

‘আমরা সরকারিভাবে জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি। এখন পেপার পত্রিকায় দেখেছি উনার শাস্তি হয়েছে।’

কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও পাপুলের বিষয়ে অন্য সূত্র থেকে কী তথ্য পেয়েছেন, সেটাও জানান মন্ত্রী।

বলেন, ‘শুনেছি, একটি কেসে উনার (পাপুল) চার বছরের জেল হয়েছে। আরও কেস বিচারাধীন আছে। এটা ঘুষ বাবদ কেস।

‘আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেছেন উনার বিরুদ্ধে মোট তিনটি কেস আছে। এটা ঘুষের। ওই দেশে ঘুষ দিয়ে উনি কাজ বাগিয়েছেন। হাজার হাজার বাংলাদেশিকে চাকরি দিয়েছেন।

‘ওইখানে উনার সঙ্গে ওই দেশীয় আরও দুইজন আছেন। আরও হলো ট্রাফিকিং (মানবপাচার), অপরটি হলো উনার মানিলন্ডারিং (অর্থপাচার)। আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ওই দুইটির রায় এখনও হয়নি।’

এই ঘটনায় কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো হেরফের হবে না বলেও আশাবাদী মন্ত্রী। বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। অনেক ধরনের সম্পর্ক তাদের সঙ্গে। যা সেই বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে শুরু।’

‘আর এমপি থাকতে পারবেন না’

এই রায় হওয়ায় পাপুল সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন- এই বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনে তো আছে, যদি কারও বিরুদ্ধে যদি ক্রিমিনাল কেস হয় এবং তিনি যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারাবেন।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হন গত জুনে

কীভাবে সংসদ থেকে অপসারিত হবেন- সেই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ থেকে অপসারণেরও রীতি আছে।…আমরা সেখান (কুয়েত) থেকে সরকারিভাবে জানার পর আমরা আমাদের পার্লামেন্টকে জানাব। এবং তখন বিধি মোতবেক ওনার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে দেশে সাজা হয়েছে, সে দেশে আমাদের যে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তিনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাবেন। মন্ত্রী আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে জানাবেন। পরে সংসদীয় কার্যালয়ের সচিব স্পিকারকে বিষয়টি জানাবেন।’

জাতীয় সংসদের হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবেই নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র পাব, সেটা কুয়েত দূতাবাসের মাধ্যমেই পাব। কাগজ আসলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিষয়টি জেনেছেন গণমাধ্যম থেকে। শুক্রবার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা এখনো পেপার পত্রিকাতেই দেখেছি। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার চেষ্টা করছি। এরপর আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

পাশে থাকবে সরকার

রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে পাপুলকে সব ধরনের সেবা দিতে রাজি থাকার কথাও জানান মন্ত্রী।

বলেন, ‘ডে ওয়ান থেকে সেটা আমরা বলে এসেছি। আমাদের মিশন রেডি টু গিব হিম টু প্রোভাইড দিস টাইপ অব সার্ভিস।

‘তিনি (পাপুল) ওইখানে গেছেন, তিনি সেখানে থাকেন নট অ্যাজ এ ডিপ্লোমেট। তিনি ওইখানে থাকেন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে।

‘উনি তো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নন। উনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। উনার নাকি আপিলের স্কোপ আছে। দেখা যাক কী হয়।’

পাপুল যেভাবে সংসদ সদস্য

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যাওয়ার কয়েক দশকের মধ্যে ধনকুবের হয়ে যাওয়া পাপুল একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হন।

সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল।

তবে ভোটের আগে আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান সরে দাঁড়ান। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাপুলের পক্ষে কাজ করেন।

পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের আসন বণ্টনের হিসাবে নারী আসনের একটি পেয়েছিলেন এবং তারা সেলিনাকে মনোনয়ন দেন।

পাপুলের স্ত্রীও আসামি

পাপুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানও অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলার আসামি।

সংসদ সদস্য পাপুলের পাশাপাশি দুর্নীতির মামলায় আসামি তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকা

দুর্নীতি দমন কমিশন গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করে। এই মামলায় সেলিনা এবং ওয়াফা গত ২৭ ডিসেম্বর জামিন পান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ করে তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলেও বলা হয় মামলায়।

বলা হয়, এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন।

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

সেলিনা ইসলাম এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের আট ব্যাংকের ৬১৩টি হিসাব জব্দও করেছে দুদক।

তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক। এজন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়েও চিঠি দিয়েছে কমিশন।

পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ মামলা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর