টিকা নেয়ার পর পাঁচ শ্রেণি-পেশার পাঁচ জনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারও ভালো আছেন সবাই। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে বুধ ও বৃহস্পতিবার ৫৭৭ জন টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ শ্রেণিপেশার ওই পাঁচ জনের ওপর নজর রাখছে নিউজবাংলা। তাদের মধ্যে তিন জন বুধবার টিকা নিয়েছেন। অন্য দুজন বৃহস্পতিবার টিকা নেন।
তারা হলেন-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী, ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম এবং এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক মাসুদ রায়হান পলাশ।
কেমন আছেন শুক্রবার বিকেলে জানতে চাইলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নিয়েছি ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ৩০ মিনিটের মধ্যে দেখা দেয়। আমার এখনও কিছু হয়নি। আমি সুস্থ আছি।’
তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টার সময় একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেই অনুষ্ঠান শেষ করে বিকেল সাড়ে তিনটার আরেকটা অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছি। আমার শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫। এর আগে অন্য কোনো টিকা নেয়ার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। আমার বর্তমানে কোনো জটিল রোগও নাই। দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, দেশকে করোনা মুক্ত করতে আপনারা টিকা নেন।’
বিশ্বজুড়েই করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা রয়েছে। টিকা নেয়ার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৪৪৭ জনের নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মৃত্যুও হয়েছে এক জনের।
এই প্রেক্ষাপটে দেশে বুধবার প্রথম করোনার টিকা নিয়েছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছি। আমাদের হাসপাতালে ১৫ দিন কাজ করার পর, ১৫ দিন ডিউটি থাকে না। যে কারণে টিকা নেয়ার পর দুই দিন ধরে বাসাতেই আছি। আমার বাসায় কোনো কাজের লোক নাই। বাসার সব কাজ আমিই করছি।’
অন্য কোনো জটিল রোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ৩৮ বয়সী এই নার্স বলেন, ‘না’।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম টিকা নিয়েছেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাতে জার্নি করে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম আসছি। সপ্তাহে কিছু দিন এখানে চেম্বার করি। আজ সকালে রোগী দেখছিলাম। কোনো ধরনের সমস্যা অনুভব করছি না।’
তিনি বলেন, ‘যে স্থানে টিকা দিয়েছে, সেই স্থানে রাতে একটু ব্যথা ছিল। তবে এ জন্য কোনো ওষুধ খাইনি।’
তার প্রেসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো কোনো রোগ নেই বলে জানান ৩৬ বছর বয়সী এই চিকিৎসক।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম টিকা নিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম।
টিকা নেয়ার পর গতকাল ছুটিতে থাকলেও শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকাতে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে ৩১ বছর বয়সী দিদারুল বলেন, ‘আমাদের ডিউটি ৮ ঘণ্টা সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে, আমি ডিউটি শেষ করে এখন বাসায় আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছি।’
গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বুধবার প্রথম টিকা নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক ৩১ বছর বয়সী মাসুদ রায়হান পলাশ।
তিনি বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার নিচে কিছু গণমাধ্যম কর্মী আসছিলেন কেমন আছি জানতে, আপনার মতো তাদের বলেছি ভালো আছি। সকালে নাশতা করে নিজের কিছু কাজ সেরে অফিসে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কয়েকজন টিকা গ্রহণকারীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কারও কারও টিকাদানের স্থানে ব্যথা দেখা দিয়েছে, কিন্তু আমার তেমন কিছুই হয়নি।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কোম্পানির টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও বাংলাদেশ অপেক্ষা করেছে অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকার জন্য। এই অঞ্চলে এটা তৈরি করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিন কোটি টিকা কিনেছে সরকার।
২১ জানুয়ারি সিরামের ২০ লাখ টিকা ভারত থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। এর চার দিন পর আসে বাংলাদেশের কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ। এরই মধ্যে ৩৬ জেলায় পৌঁছে গেছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকাররে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
প্রথম দিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরও ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে।
টিকা নেয়া কারও মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।