তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর ভাসাচরে পৌঁছাল ১ হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আসা রোহিঙ্গাদের মতো তাদেরও বরণ করেছেন ভাসানচরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শুক্রবার দুপুরে নৌবাহিনীর চারটি জাহাজে ১ হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছায় বলে নিশ্চিত করেছেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মামুন চৌধুরী।
সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বোটক্লাব সংলগ্ন ঘাঁট থেকে রোহিঙ্গারা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে এসব রোহিঙ্গাকে বাসে করে চট্টগ্রামে নেয়া হয়।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ এবং দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের ১ হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। দুই দফায় স্থানান্তরিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ৩ হাজার ৪৪৭। তারও আগে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক আরও ৩০৫জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে রাখা হয়। এ নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়েছে ৫ হাজার ৫৩০ রোহিঙ্গা।
ভাসানচর থানার ওসি মাহে আলম নিউজবাংলাকে জানান, নৌবাহিনীর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ।
নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মামুন চৌধুরী জানান, ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গারা প্রত্যাশার তুলনায় জীবন মানের উন্নত সুযোগ-সুবিধা দেখে খুশি। নির্ধারিত বাসস্থান, খাবারের নিশ্চয়তা ও বাংলাদেশ সরকারের দেয়া নানা সুযোগ-সুবিধায় কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছেন এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাতে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢল আসা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট।
ওই সময় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপের মুখে পড়েও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার। উল্টো রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে মেঘনা নদীর নোয়াখালী অংশে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
এ জন্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রাম করা হয়েছে।