কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ‘অভাবের তাড়নায়’ ১৫ মাসের সন্তানকে সেতু থেকে খালে ফেলে দিয়েছেন এক নারী।
উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি সেতু থেকে শুক্রবার সকালে শিশু জাহিদকে পানিতে ফেলে দেন মা জামিলা বেগম। পরে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
শিশুটি বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও এলিনা বেগম দম্পতির হেফাজতে রয়েছে। সে সুস্থ আছে।
প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ জানান, সকাল ৯টার দিকে বাজারে যাওয়ার পথে সেতু থেকে এক নারীকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখেন। নিচে তাকিয়ে দেখেন ছোট একটি শিশু পানিতে হাত-পা নাড়ছে। ওই সময় তিনি চিৎকার দিলে আরও দুই জন এগিয়ে আসেন। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তারা।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারের পর আগুনের তাপে শিশুটিকে সুস্থ করা হয়। পরে সেতুর পাশেই রফিকুল-এলিনা দম্পতির হেফাজতে রাখা হয় তাকে।
উদ্ধারের পর শিশু জাহিদকে রফিকুল-এলিনা দম্পতির হেফাজতে রাখা হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
শিশুটির মা জমিলা জানান, জাহিদের বয়স যখন এক মাস, তখন স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন তিনি। পরে দরিদ্র বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু দিনমজুর বাবার বাড়িতে অভাবের কারণে সন্তানের ভরণ-পোষণ নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হতো।
তিনি আরও জানান, শুক্রবারও এ নিয়ে দ্বন্দ্বের পর বাবা রাগারাগি করে তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে শিশু জাহিদকে সেতু থেকে নিচে ফেলে দেন।
জমিলার বাবা আরও জানান, দুই বছর আগে রংপুরের হাফিজুরের সঙ্গে জমিলার বিয়ে দেন। বিয়ের এক বছর পরই এক মাসের সন্তানকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসেন জমিলা।
তিনি আরও জানান, বড় মেয়ের স্বামীও তার তিন সন্তানের খরচ দেয় না। তারাও তার সংসারে রয়েছে। শুধু তার দিনমজুরিতে পরিবারের ৯ সদস্যের ভরণ-পোষণ করা সম্ভব হয় না।
জমিলার মা জানান, জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকে।
প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম নামের এক জন জানান, জমিলার পরিবারে ঝগড়া লেগেই থাকে। শুক্রবারও জমিলার বাবা রাগারাগি করেন। অভাবের সংসারের চাপ নিতে না পেরেই বোধহয় সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন জমিলা।
শিশুটিকে হেফাজতে নেয়া এলিনা বেগম জানান, অভিভাবকরা রাজি থাকলে তিনি শিশুটিকে দত্তক নিতে চান।
বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটি সুস্থ আছে। এখন রফিকুল-এলিনা বেগম দম্পতির কাছে থাকলেও শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে পরিবারটিকে সহযোগিতা করবেন তিনি।