নির্বাচন কমিশনে ভিন্নমত দিয়ে নানা সময় আলোচনায় আসা মাহবুব তালুকদার কেন পদত্যাগ করেন না, জানতে চেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মাহবুব তালুকদার বিরক্তি প্রকাশের পরদিন তিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, এই পদত্যাগে উদাহরণ তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর এই নির্বাচনকে ‘কম সহিংসতার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বললেও আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এই নির্বাচন অনিয়মের মডেল।
গত কয়েক বছর ধরে ভোটার খরার নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৬ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি পরিস্থিতি পাল্টানোর আভাস দিচ্ছিল। এর মধ্যে বুধবার বন্দরনগরীর এই নির্বাচনে দৃষ্টি ছিল দেশবাসীর।
কিন্তু গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতার মতোই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম, বিরোধী দলের এজেন্ট না থাকা, ইভিএমের বুথে ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দিতে না পারার মতো অভিযোগ ওঠে।
পরদিন মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে অরাজকতা দেখা গেছে, তাতে আমি হতাশ।’
তিনি বলেন, ‘সহিসংতা, কেন্দ্র দখল, পুলিশের গাড়ি ও ইভিএম ভাংচুর ইত্যাদি ঘটনা এই নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। এ ধরনের তাণ্ডব বন্ধ করতে আমাদেরকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজে পেতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ব্যতীত তা সম্ভব হবে না। এজন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য প্রয়োজন।’
নির্বাচনে সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘অল্পসংখ্যক ভোট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হতে পারে না। এই পরিস্থিতি নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার পরিচায়ক, যা গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত। সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিত অবশ্যই বেশি হতো।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘মাহবুব সাহেব ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু উনি পদত্যাগ করেন না কেন? এই নির্বাচন কমিশনে উনি থেকে লাভ কী?’
এই নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘একটা উদাহরণ সৃষ্টির জন্য আমি মাহবুব তালুকদারকে আহ্বান করছি। পদত্যাগ করুন। দেশবাসী বুঝবে একটি হলেও প্রতিবাদী কণ্ঠ আছে।’
আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি বাতিলের দাবি পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি পরিষদ’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন করা হয়েছে দুটি আমলে। প্রথমে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে এই বিধান চালু করেন।
এরপর ২০০৭-৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিধি-বিধান মেনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আবার চালু হয়। সেটি এখনও বহাল আছে।
শর্ত ভঙ্গের জন্য স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গঠন করা ফ্রিডম পার্টি আর তত্ত্বাবধায়ক আমলে কিংস পার্টি নামে পরিচিত হয়ে ওঠা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিবির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন সিরিয়াল কিলার। এই সিরিয়াল কিলার নিরাপদে ঘুরে বেড়াবে এটা কি কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘সিরিয়াল কিলারের একটা মাত্র শাস্তি। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ৪২ নাগরিকের চিঠির কথাও তুলে ধরেন জাফরুল্লাহ। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এই চিঠি দেয়া হলেও বঙ্গভবন থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘৪২ জন সিনিয়র সিটিজেন পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন তারা (নির্বাচন কমিশন) গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু তাই না তারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।’
নির্বাচন কমিশন সংবিধান লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একটা ধর্মগ্রন্থের মতো পবিত্র। এটা আমার অধিকারকে রক্ষা করে।
‘কে আমার দেশ চালাবে সেটা নির্ণয় করার অধিকার আমার। আমার ভোটের অধিকার। ভোটের দ্বারা এমন একটা সরকার আনতে হবে যে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।’
বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয় অভিযোগ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই সরকার রাতের আঁধারে তাদের আমলাদের দ্বারা গঠিত, পুলিশের দ্বারা গঠিত। তাদের চুরি ডাকাতি পৃথিবীর অনন্য ইতিহাস। এইরকম চুরির ইতিহাস আর কোথাও নাই। প্রত্যেকে জানে কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঘুমিয়ে থাকে।’
সবাইকে এক হয়ে মাঠে নামার তাগাদা দিয়ে ঐক্যফন্ট নেতা বলেন, ‘আমরা একবার রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে ভুলে যাই।’