করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দুই ডলার ৩৩ সেন্টের ভ্যাকসিন এরা (সরকার) চার ডলার দিয়ে কিনছে। মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে নিজস্ব একজন সুবিধাভোগীকে তারা সেই দায়িত্ব দিয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের হাতে স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ কোনো সেবা পায় না। সাধারণ মানুষ যাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার, তারা সেটা পাচ্ছে না।’
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার টিকা কিনছে সরকার। এই টিকার ক্রয়মূল্য নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সম্প্রতি তার সবকটির জবাব দিয়েছে সিরামের বাংলাদেশের এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা।
ধানমন্ডিতে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন ওষুধ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। বলেন, ‘যে চুক্তি হয়েছে, তাতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
পাপন জানান, দাম ঠিক করার সময় তারাই সরকারকে পরামর্শ দেন, ভারত যে দামে কিনবে, বাংলাদেশ যেন সেই দামে পায়।
পাপন বলেন, ‘যেহেতু সে দেশে উৎপাদন হচ্ছে, আমরা ধারণা করেছিলাম, ভারত সরকার কিছুটা কমে পাবে টিকা। এই ধারণাবশত আমরা একটা কন্ডিশন লাগাই যে, ভারত সরকারকে যে দামে দেবে,আমাদেরকেও সে দামে দিতে হবে।’
তাহলে চার ডলারের প্রসঙ্গ কেন এলো-তারও ব্যাখ্যা দেন পাপন। বলেন, ‘ওরা এগ্রি করল। তখন কথা হলো আমরা যে টাকা পাঠাব, কী দাম ধরে পাঠাব? তখন দাম ধরা হলো চার ডলার।’
বেক্সিমকো এমডি আরও জানান, চুক্তিটা এমন, ভারত যদি চার ডলারের বেশিতে টিকা কেনে, তাহলে বাংলাদেশকে চার ডলারেই দিতে হবে, আর ভারত যদি চার ডলারের কমে নেয়, তাহলে বাংলাদেশকে সে দামেই দিতে হবে।
এই ব্যাখ্যার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে করোনার টিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত বড় একটা মহামারি…। সারা বিশ্বে আক্রমণ করেছে, এটাকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের (সরকার) ভূমিকাটা দেখেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু তারা দুর্নীতি করেছে। এমনভাবে শুরু হয়েছে যে, এটা এখন ভঙ্গুর অবস্থায়।
‘প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন, এখানে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে- দুর্নীতি। যার ফলে কী হয়েছে? দুই শ্রেণি হয়েছে। একটা দারিদ্র্য শ্রেণি, আরেকটা বিত্তশ্রেণি। বড় লোক শুধু বড়ই হয়েছে আর গরিবরা শুধু গরিবই হয়েছে।’
সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার যে সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করতে যাচ্ছি, সেই জয়ন্তীতে আমরা জিয়াউর রহমানকে সবচেয়ে বড় ফোকাস পয়েন্টে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। সরকার ইতিহাসকে বিকৃত করছে।’
সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিনষ্ট করতে চায়। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা…. সেই পুরানো মামলা নিয়ে আসছে।
‘গত পরশু সাতক্ষীরায় ২০০২ সালের একটি মামলায় আমাদের দলের সম্পাদক সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ প্রায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার রায় হবে।‘সম্ভবত সেই মামলায় তাদেরকে সাজা দেয়া হবে। এটা হচ্ছে সরকার অপকৌশল যে, এভাবে জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা ও তাদের মুক্তি দাবি করছি।’
দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিএনপির স্বাস্থ্য খাতে অবদান ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্রের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
উপস্থিত ছিলেন সাইফুল ইসলাম সেলিম, মোফাক্কারুল ইসলাম রানা, আবদুস শাকুর খান, আজহারুল ইসলাম, জাহিদুল কবির, ফেরদৌস আহমেদ, নিলুফার ইয়াসমীন, জাহানারা বেগমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।