তৃতীয় দফায় প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গা জাহাজে করে ভাসানচর যাবে।
বাকি ১ হাজার ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে নৌবাহিনীর জাহাজ শনিবার সকালে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে ৮৫০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে ২০টি বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ রওনা দেয়।
এ ছাড়া রাতে কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা বাসের আরেকটি বহর চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার আরেকটি বহর চট্টগ্রাম আসবে।
চট্টগ্রামে আনার পর রোহিঙ্গাদের পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি ঘাট থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে ভাসানচরে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুর-দ্দৌজা নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, তৃতীয় দফায় অন্তত তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। শুধু উখিয়া কলেজ মাঠ ও বালুখালী ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভাসানচরে যাবে রোহিঙ্গারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম জানান, ‘নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, তৃতীয় দফায় প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে আনা হচ্ছে। এর মধ্যে শুক্রবার ১ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরে আসবে। অন্যদের আনা হবে শনিবার।’
বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছে। সেখান রোহিঙ্গাদের মালামাল বোঝাই করার জন্য ট্রাক-কাভার্ড রয়েছে।
ট্রানজিট ক্যাম্পে কথা হয় কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রের ৭ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি আবদুস সালামের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্প থেকে ১৫০ জনের মতো লোককে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে কাউকে জোর করা হয়নি। সবাই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন।’
৭ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ভাসানচরত আঁরার মানুষ গেইয়্যি। ইতারার লগে আঁরা হত হই। ইতারে জানাইয়ি দে, ভাসানচরত বওত সুবিধে। এন্ডে বেগ্গিন গরি হাইত পাইজ্জুম। এতাল্লাই আঁরাও যাইরগয়।’
(ভাসানচরে আমাদের মানুষ গেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, ভাসানচরে অনেক সুযোগ-সুবিধা। সেখানে সবকিছু করে খেতে পারব। তাই আমরাও যাচ্ছি।)
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিনিধিরা উপস্থিত। মাঠে একাধিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই রাত কাটাবেন রোহিঙ্গারা।
এর আগে ৪ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দফায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হয়। এ ছাড়া মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে গত বছরের মে মাসে ভাসানচর নেয়া হয়।
নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাতে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বহু বছর ধরে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢল আসা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। সেবার সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপের মুখে পড়েও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার। বরং রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে মেঘনা নদীর নোয়াখালী অংশে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এজন্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অন্তত ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রাম করা হয়েছে।