নগরবাসীর উন্নয়নে ১০০ দিনের অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
নগরের বহদ্দারহাটে নিজ বাসভবনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তিনি এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তোলা, মশা নিধন করা এবং ভাঙা রাস্তা মেরামত করা।
মেয়র বলেন, ‘জনগণ শতভাগ আস্থা রেখে আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করব। তবে নগরীতে অনেক সমস্যা। তাই কথার ফুলঝুড়ি দিতে চাই না। যতটুকু পারব ততটুকু করব।
‘চট্টগ্রাম নগরকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করব। যদিও শতভাগ মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত হবে না। অন্ততপক্ষে ৮০ ভাগ মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করি, যদি আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করি।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলা প্রসঙ্গে রেজাউল বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আপনারা দেখেছেন চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামের মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিল। ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ ছিল। করোনা আক্রান্ত না হয়েও অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন।
‘আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মীকে করোনাতে হারিয়েছি। অথচ তারা চিকিৎসা পায়নি। ক্লিনিকে ভর্তি হতে পারেনি; খাওয়ার জন্য ওষুধ পায়নি। তাই আমি নিজেও আইসোলেশন সেন্টার দিয়েছি...৪১টি ওয়ার্ডের মানুষ যাতে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা পায়, তাই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলব।’
চট্টগ্রামের উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামকে আমি পরিকল্পিতভাবে সাজাতে চাই। এ জন্য সবার সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পর্যালোচনা করে যেটা বাস্তবসম্মত হবে, সেটাই গ্রহণ করব। বিভিন্ন এলাকায় অনেক সমস্যা আছে।
‘ওয়ার্ডগুলোতে-মহল্লায় অনেক দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। এক জন রিকশাচালকেরও মেধা আছে, বুদ্ধি আছে। আর্থিক সমস্যার কারণে সে হয়তো উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। তার বুদ্ধিও অনেক সময় কাজে লাগতে পারে।’
স্থানীয়দের পরামর্শ নেয়া হবে জানিয়ে রেজাউল বলেন, ‘আমি এলাকার সব মানুষকে ডাকব। মহল্লা সর্দার থেকে আরম্ভ করে এলাকার গণ্যমান্য লোক, সবার পরামর্শ নেব। আপনার এলাকার কী সমস্যা আছে, সেটা আপনিই চিহ্নিত করতে পারেন। বাইরের কেউ এসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
‘তারপর এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, তাদের পরামর্শ নিয়ে এবং যে পরামর্শ গ্রহণযোগ্য হবে, যে পরামর্শ ওই এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রযোজ্য হবে, সেটাই গ্রহণ করব ও বাস্তবায়ন করব। তখন কেউ আর এককভাবে মেয়রকে দোষারোপ করতে পারবে না।’
এ সময় নতুন প্রজন্মকে নিয়ে পরিকল্পনার কথাও জানান নতুন মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা স্কুলে যায়, দুপুরে খেয়ে-দেয়ে ঘুমায়, বিকালে টিচার আসে। খেলাধুলার কোনো জায়গা নাই…চেষ্টা করব ছোট হোক, বড় হোক যদি খেলার মাঠ করে দেয়া যায়, তাহলে আমাদের শিশুরা সেখানে গিয়ে খেলতে পারবে।
‘কিশোর গ্যাংয়ের কথা বলা হয়। আজকে যুবসমাজ মাদকাসক্ত হচ্ছে…যদি সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে তাদের ধাবিত করতে পারি, তাহলে অনেকাংশে আমাদের যুবকদের সেখান থেকে সরিয়ে আনতে পারব। তাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যতটুকু পারা যায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার একটা চিন্তা-ভাবনা আমার আছে।’
এ সময় সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার কথাও বলেন চট্টগ্রামের নতুন নগরপিতা রেজাউল।
ভোট খরা ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়ে বুধবার চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন পান ৫২ হাজার ৪৭৯ ভোট।