বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একপেশে ভোটে চট্টগ্রামের মেয়র নৌকার রেজাউল

  •    
  • ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০২:০০

বিরোধীদের নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে আলোচিত ভোটে বড় জয় পেল ক্ষমতাসীন দল। বৈধ ভোটের ৮২ শতাংশ পড়েছে নৌকা মার্কায়। এ নিয়ে ছয়টি সিটি নির্বাচনের পাঁচটিতেই জয় পেল আওয়ামী লীগ। তবে কখনও এত বেশি ভোটে জয় আসেনি সেখানে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, একজনের প্রাণহানি আর ভোটার খরার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী আশা করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের। তবে তা হয়নি, একপেশে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন তিনি।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের তুলনায় বিজয়ী নৌকার ভোটের ব্যবধান হয়েছে অস্বাভাবিক বেশি। ধানের শীষের ৭.২২ গুণ ভোট পেয়েছে নৌকা।

যত বৈধ হয়েছে, তার ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটই পড়েছে নৌকায়।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গঠনের পর ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেল আওয়ামী লীগ। আর এবারের নির্বাচনেই ভোটের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি।

যদিও বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এটা কোনো নির্বাচন হয়নি। তাদের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে।

কার ভোট কত

রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ভোট পেয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজার ২৪৮ ।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের ধানের শীষে ভোট পড়ে সাত ভাগের একভাগ মাত্র। তিনি ভোট পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৭৯ ভোট।

অর্থাৎ প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান তিন লাখ ২৭ হাজার ৭৬৯। এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এত বেশি ব্যবধানে কেউ জেতেননি।

ইভিএমে ভোট হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের ফলাফল ঘোষণা করতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়

বুধবার দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে গোলযোগের কারণে। ওই দুই কেন্দ্রের ভোট দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানের চেয়ে কম হওয়ায় সেগুলো আর নির্বাচনী ফলাফলে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে চার হাজার ৯৮০ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম। যদিও তিনি এই নির্বাচন বর্জন করেছেন।

চতুর্থ হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনসুর। তিনি পেয়েছেন চার হাজার ৬৫৩ ভোট।

পঞ্চম স্থানে আছেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এম এ মতিন। তার ভোট দুই হাজার ১২৬।

ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ। তিনি পেয়েছেন এক হাজার ১০৯ ভোট।

আর ভোটের হিসেবে সবার নিচে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৮৮৫।

নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৬ জন।

এর মধ্যে সাত জন মেয়র প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন চার লাখ ৪৬ হাজার ৪৮০টি। আর দুটি কেন্দ্র স্থগিত ও কিছু ভোট বাতিল হওয়ার পর ২৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছে, এটা বলা যায়।

এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে যে ব্যবধান হয়েছিল, এবার তার চেয়ে হয়েছে অনেক বেশি।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ভোট পান চার লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১টি। বিএনপির এম মনজুর আলম ভোট পান তিন লাখ চার হাজার ৮৩৭ ভোট। ব্যবধান ছিল এক লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ ভোট।

প্রচারে ব্যাপক আগ্রহ, ভোটে ভাটা

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হলেও ফলাফল ঘোষণা করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ভোট শেষ হওয়ার ১০ ঘণ্টা পর ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত ফলাফল। এর কারণ ৭৩৫টি কেন্দ্রের ফল আলাদাভাবে ঘোষণা করতে হয়েছে। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলও জানাতে হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে।

দিনভর ভোটার খরা দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। বিএনপির প্রার্থীর কেন্দ্রে ভোট পড়েছে একেবারেই নগণ্য

গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৬ জানুয়ারি দেশের ৮৪টি পৌরসভায় ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতিতে ভোটের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ছিল দেশবাসীর। জাতীয় গণমাধ্যমগুলো স্থানীয় প্রতিনিধির পাশাপাশি ঢাকা থেকেই সংবাদকর্মী পাঠায় সংবাদ সংগ্রহে।

গত তিন সপ্তাহ ধরে বন্দরনগরীতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় যে প্রচার চলেছে, ভোটের দিনের চিত্র তার পুরো বিপরীত। যেন ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই ভোটারের। দিনভর ফাঁকা ছিল কেন্দ্রগুলো।

এর মধ্যেও কিছু কেন্দ্রে বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন একজন পথচারী।

ভোট চলাকালে বিভিন্ন এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেও কারচুপির অভিযোগ মিলেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর অন্য একজন তার হয়ে ভোট দিয়ে দেয়ার ঘটনায় একটি কেন্দ্রে একজন ভোটার ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই ভিডিও বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে এসেছে।

বুধবার সকাল আটটায় ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে বিলম্ব হয়।

বিকাল চারটার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করতে শুরু করেন। যত সময় গড়িয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ব্যবধান কেবলই বেড়েছে। কোথাও বিএনপি জিতেছে, এমন কেন্দ্র খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভিন্ন মূল্যায়ন

ভোট গণনার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও গতবারের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তার বিজয়ে আমি সামান্য হলেও অবদান রাখতে পেরেছি।’

ভোটার কেন কম- এমন প্রশ্নে নাছির দায়ী করেন বিএনপিকে। তিনি বলেন, ‘এর কারণ বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণা। তারা সব সময় বলেছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে না, সহিংসতা হবে। আমাদের ভোটারদের যেতে দেবে না। এজেন্টদের বের করে দেবে। এই ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে। এতে তাদের নেতা-কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। ফলে তারাও ভোটকেন্দ্রে আসার সাহস পাননি।’

ভোট শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামবাসীর ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ব্যাপক। ভোট শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, পুলিশ কোনো সাহায্য করেনি। ইভিএম কক্ষের সুরক্ষা ছিল না। বহিরাগতরা ছিল অনেক। আমাদের ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। নির্বাচন হয়নি, হয়েছে নির্যাতন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনই হয়নি যেখানে, সেখানে ফলাফল গ্রহণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো জায়গায় ইভিএমে ধানের শীষ বাটনই নষ্ট ছিল। কোথাও কোথাও ধানের শীষ চাপলে আম চলে এসেছে। ভোট ডাকাতির সঙ্গে যোগ হয়েছে চরম নির্যাতন। এটি অর্থহীন নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।’

ভোটার অনুপস্থিতির জন্য আরও কিছু কারণ থাকতে পারে।

সকাল আটটায় ভোট শুরুর ঘণ্টা দুই পর নগরের খুলশী থানার আমবাগান ঝাউতলার ইউসেফ এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতার সময় গুলিতে আলাউদ্দিন আলম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

এ ছাড়াও ভোটের সকালে লালখান বাজার ও পাহাড়তলি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন।

এসব কারণে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে কেন্দ্রমুখী না হয়ে বাড়িতেই ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীরও মেনেছেন চট্টগ্রামে ভোটার কম ছিল। তার ব্যাখ্যা ছিল এমন: ‘উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ দেশে ভোটের ক্ষেত্রে এমন হয়। আমেরিকার ক্ষেত্রে দেখবেন- এতো উন্নত সব দিক দিয়ে উন্নত তারা; কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে তারা ভোট দিতে যায় না বেশিরভাগ মানুষ। তো আমাদের দেশেও অনেকটা ওই রকম, উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মানসিকতা বদল হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর