চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগ তো বটেই ঘটেছে প্রাণহানি। সেই সঙ্গে সহিংসতা আর ভোটারদের অনাগ্রহ দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পদক বলছেন, ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে সংসদ ভবনে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে বিএনপির অপপ্রয়াস ভন্ডুল হয়েছে।’
ভোটার কম হওয়ার পেছনে কাদেরের যুক্তি, ‘নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা না করায় এবং গণপরিবহন বন্ধ ছিল বিধায় ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। তবে করোনা মহামারিজনিত শঙ্কা কাটিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক।’
সহিংসতা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ভাঙচুর, প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকার মধ্য দিয়ে বুধবার শেষ হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
সকালে ভোট শুরুর ঘণ্টা দুই পর নগরের খুলশী থানার আমবাগান ঝাউতলার ইউসেফ এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতার সময় গুলিতে আলাউদ্দিন আলম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আলম গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
আমবাগান ঝাউতলার সহিংসতা ছাড়াও ভোটের সকালে লালখান বাজার ও পাহাড়তলি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন।
এ সব সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে কাদের বলেন, ‘বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কর্তৃক ইভিএম মেশিন ভাঙা এবং কেন্দ্র দখলসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি, যা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
‘বরাবরের মতো বিএনপি ভোটের মাঠে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার দায় ভার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এই নির্বাচনে প্রথম থেকেই বিএনপির প্রার্থীসহ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে তা তাদের আমলেও পায়নি।’
ওবায়দুল কাদেরের দাবি, নির্বাচন বানচালে বিএনপির অপপ্রয়াস ভন্ডুল হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
কাদের বলেন, ‘বিএনপি ৭৩৫টি কেন্দ্রের সকল কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের সেই সাংগঠনিক ক্ষমতাও নেই। তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে ও গণরায়কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগরীর জনগণ কখনোই বিএনপির পক্ষে সমর্থন দেয় নাই। এমনকি তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জয়ী হয়েছে। শুধু একবার বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মঞ্জুর আলম নির্বাচিত হলেও মূলত রাজনৈতিকভাবে তিনি আওয়ামী মতাদর্শের মানুষ ছিলেন।’
কাদেরের অভিযোগ, বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে জেতার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মঞ্জুর আলমকে নিয়ে সেবার প্রার্থী করেছিল।
২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হন মঞ্জুর আলম। সেবার বিএনপির সমর্থন নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন নামের একটি ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করেন তিনি। ৯৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে।
মনজুর আলম ১৯৯৪ সালে প্রথম ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে। এরপর ১৭ বছর সেই দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার লক্ষ্যে নিরাপত্তার জন্য ১৮ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ২৫ প্লাটুন বিজিবি মতায়ন করা হয়।
মোটামুটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সকল ভোটার, জনসাধারণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।