করোনার টিকা প্রয়োগের সময় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা করছিল সেখানে গিয়ে টিকা নিতে। পরে নিজেই জানালেন কেন শুরুতেই তিনি টিকা নিলেন না।
করোনার প্রথম যে পাঁচ জন টিকা নিয়েছেন, তাদের সবার সঙ্গেই ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়েছে সরকার প্রধানের।
এই পাঁচ জনের মধ্যে সবার শেষে টিকা পান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। তাকে যখন টিকা দেয়া হচ্ছে সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘মনে হচ্ছে আমরাও গিয়ে নিয়ে আসি।’
পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘আগে আগে নিলে বলত নিজেই নিল অন্য কাউকে দিল না। সবাইকে দিয়ে নিই তারপরে।’
বাংলাদেশে করোনার টিকা যখন আসেনি, তখন ফেসবুকে একটি তালিকা ভারাইল হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়, টিকা প্রথমে সরকারের উচ্চপদস্থরাই নেবে। তখন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিএনপি সে সময় প্রশ্ন তোলে, কেন সাধারণকে আগে টিকা দেয়া হবে না।
তবে সরকার যখন করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রথম টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল, তখন বিএনপি অবস্থান পাল্টে বলে, আগে কেন প্রধানমন্ত্রী টিকা নেবেন না।
দলটির দাবি, সরকার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে টিকা এনেছে, সেটা নিরাপদ নয়। আর সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী নিজে টিকা নিচ্ছেন না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনও বলেছেন, টিকা দিয়ে সরকার বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।
বুধবার টিকা দান কর্মসূচি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এসব বক্তব্য নিয়ে কিছু না বললেও ইঙ্গিত করে নানা কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক সব কিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। মানুষ সাহায্য পায় না, কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলেই খালি সন্দেহ। তারা কিছু ভালো লাগে না রোগে ভোগে।’
‘কোন টিকায় যে এই রোগ ভালো হবে!’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পত্রিকা দেখলেই পাবেন, নানা প্রশ্ন তাদের।’
তবে সাহস করে তারাও টিকা নিতে এগিয়ে আসবেন আশা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তাদেরও টিকা দেব। তারাও যেন সুরক্ষা পায়।’
সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা না থাকলে আমাদের সমালোচনা করবে কে? সমালোচনারও লোকও দরকার আছে। যত সমালোচনা হয়েছে, তত দ্রুত কাজ করার প্রণোদনা পেয়েছি।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে দিয়ে দেশে শুরু হয় করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম।
টিকা নিতে এসে শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে সম্ভাষণ জানান রুনু। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো? ভয় পাচ্ছ না তো?’
জবাবে রুনু বলেন, ‘না ম্যাডাম।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী রুনুকে বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি।’
এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাকে টিকা প্রদান করেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। টিকা দেয়া শেষ হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন ওঠেন, ‘হয়ে গেলো।’ এরপর হাততালি দিয়ে রুনুকে উৎসাহ দেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রুনু তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তুমি সুস্থ থাকো, ভালো থাকো আরও অনেক রোগীর সেবা করো, সেই দোয়া করি।’
টিকা নিতে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানাকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘নার্ভাস লাগছে না তো?’ জবাবে নাসিমা বলেন, ‘না। ঠিক আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
এ সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাসল রিল্যাক্স করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক দিদারুল ইসলাম টিকা নিতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘ঠিক আছো?’
দিদারুল জানান তিনি ঠিক আছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটু কথা বলে রিল্যাক্স করাই।’