বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সমালোচকরাও টিকা নেবেন, আশায় প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:৫৮

‘কিছু লোক সব কিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। মানুষ সাহায্য পায় না, কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলেই খালি সন্দেহ। তারা কিছু ভালো লাগে না রোগে ভোগে। কোন টিকায় যে এই রোগ ভালো হবে!... সাহস করে তারাও টিকা নিতে এগিয়ে আসবেন। আমরা তাদেরও টিকা দেব। তারাও যেন সুরক্ষা পায়।’

করোনার টিকা নিয়ে যারা নেতিবাচক কথা বলছেন, তাদের ‘রোগ’ কোন টিকায় ভালো হবে, বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা কোনো কাজ করে না, আবার কেউ কাজ করতে গেলেই সন্দেহ করে।

করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করে বুধবার এই কথা বলেন সরকারপ্রধান।

বুধবার বিকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে দিয়ে দেশে শুরু হলো করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হন ভার্চুয়ালি।

প্রথমে টিকা নেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ রুনু বেরুনিকা কস্তা। এরপর নেন হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক দিদারুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

প্রথম পাঁচ জন টিকা নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশেই দেবো, যাতে করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়।’

বাংলাদেশ প্রয়োগ করছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড, যেটি উৎপাদন করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট। এটি অবস্থিত ভারতে।

সেখান থেকে বাংলাদেশ তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনেছে, তার ভারত উপহার দিয়েছে ২০ লাখ টিকা। তবে বাংলাদেশ যত টিকা কিনেছে, তার মধ্যে প্রথম চালান এসেছে ৫০ লাখের। প্রতি মাসেই আসবে সমপরিমাণ টিকা।

এর বাইরে সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে উঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে সরকার পৌনে সাত কোটি টিকা পাবে, যা জুনের মধ্যে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকারকে ধন্যবাদ। ৫০ লাখ এসেছে। আরও আসবে। সব কিছু যেন ভালোভাবে হয়।’

করোনার টিকা নিচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ

করোনার এই টিকা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি সমালোচনামুখর। প্রথমে তারা বলছিল, সাধারণ মানুষ কেন আগে টিকা পাবে না। এখন তারা বলছে, এই টিকা নিরাপদ নয়, সাধারণ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে সরকার এটা পরীক্ষা করছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনও বলেছেন, টিকা দিয়ে সরকার বিএনপিকে মেরে ফেলতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক সব কিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। মানুষ সাহায্য পায় না, কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলেই খালি সন্দেহ। তারা কিছু ভালো লাগে না রোগে ভোগে।’

‘কোন টিকায় যে এই রোগ ভালো হবে!’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পত্রিকা দেখলেই পাবেন, নানা প্রশ্ন তাদের।’

তবে সাহস করে তারাও টিকা নিতে এগিয়ে আসবেন আশা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তাদেরও টিকা দেব। তারাও যেন সুরক্ষা পায়।’

সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা না থাকলে আমাদের সমালোচনা করবে কে? সমালোচনারও লোকও দরকার আছে। যত সমালোচনা হয়েছে, তত দ্রুত কাজ করার প্রণোদনা পেয়েছি।’

টিকার মাধ্যমে দেশ নিরাপদ হবে আশাকরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সময় মতো ভ্যাকসিন ক্রয় করতে পেরেছি, আনতে পেরেছি। প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব।’

দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশই এখনও টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই যে আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি, এটাই প্রমাণ হলো।’

টিকা প্রয়োগের আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সময় মতো ভ্যাকসিন ক্রয় করতে পেরেছি, আনতে পেরেছি। প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব।’

দেশ যেন দ্রুত করোনামুক্ত হয়, সে জন্য দেশবাসীর দোয়াও চান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘সবাই দোয়া করেন যেন আমরা করোনা থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের অনেক আপনজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা চাই, সকলেই এই করোনা থেকে মুক্তি পাক। আমাদের এ যাত্রা যেন সফল হয় এজন্য সকলেই আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন।’

বাংলাদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের মার্চে। সাড়ে ১০ মাসে দেশে মারা গেছে আট হাজারের বেশি। সংক্রমণ ছাড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার।

সারা বিশ্বে করোনা শনাক্ত ছাড়িয়েছে ১০ কোটি, মৃত্যু হয়েছে ২১ লাখের বেশি।

এই রোগের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না স্বাভাবিকভাবে। ফলে বাড়ছে দারিদ্র্য।

এই পরিস্থিতিতে করোনার টিকা কার্যক্রম যথা সম্ভব শুরু করতে চাইছে সবগুলো দেশই। তবে চাহিদা মতো টিকা পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে মডার্না, ফাইজার, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা-স্পুৎনিক, সিনোভ্যাকের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বব্যাপী অনেক সংস্থা সক্রিয় আছে। তাদের মতামত ও অনুশাসন মেনেই আমরা চলছি। এই ভ্যাকসিনও এসেছে সে পথেই। আমরা আশা করছি, এই মহামারি থেকেও বাংলাদেশ দ্রুত রক্ষা পাবে।’

করোনার টিকা দেশে আনার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুরুতে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের কাছে নির্দেশ ছিল, বিশ্বের যেখানেই প্রথমে ভ্যাকসিন আসবে সেটা আমরা নেব। অক্সফোর্ড যেটা উদ্ভাবন করল, ভারতের সিরাম প্রস্তুত করল।

‘তারা যোগাযোগ করল বেক্সিমকোর সঙ্গে। তাদের বললাম যত দ্রুত কেনা যায়, চুক্তি করা যায়। এরপর আমরা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করলাম। এই চুক্তির আওতায় আমরা তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা পাব। আর এরজন্য শুরুতেই এক হাজার কোটি টাকা আলাদা করে বরাদ্দ করা ছিল।’

প্রথম ধাপে আসা টিকা এরই মধ্যে নিয়মানুযায়ী ল্যাবে পরীক্ষা করে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সমন্বিত টিকা দান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

প্রথম ধাপে অগ্রাধিকার পাবে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, জাতীয় অধ্যাপক, জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, বরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনার অপরিহার্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকার কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।

জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ও ফায়ার সার্ভিস এর কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেল, বিমান ও নৌ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জাতীয় দলের খেলোয়াড়, ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিক এবং ৫৫ বছর ও তদুর্ধ্ব নাগরিকরাও আছেন অগ্রাধিকারের তালিকায়।

টিকা নিতে হলে সুরক্ষা এ্যাপে (surokkha.gov.bd) অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। যাদের ইন্টারনেট বা অ্যাপ ব্যবহারের সঙ্গতি নেই, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করবেন।

এ বিভাগের আরো খবর