সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ১৬ বছর পরও শেষ হয়নি বিচার। সাক্ষীর অভাবে থমকে আছে বিচার প্রক্রিয়া।
আওয়ামী লীগের এ নেতাকে হত্যার ১৬তম বার্ষিকী আজ বুধবার। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কিবরিয়া।
ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলার বিচার চলছে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সাক্ষী না যাওয়ায় কার্যত থমকে আছে বিচার।
উভয় মামলায় ১৭৩ জন সাক্ষী থাকলেও এখন পর্যন্ত হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪২ জন। বিস্ফোরক মামলায় এখনও কেউ সাক্ষ্য দেননি।
সিলেটের পিপি সারোয়ার আহমেদ আবদাল বলেন, ‘মামলার আসামিদের বিভিন্ন কারাগারে থাকা এবং সাক্ষীদের উপস্থিত না হওয়ায় বিচারে দেরি হচ্ছে।’
দেড় দশকের বেশি সময়েও বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে কিবরিয়ার পরিবার। এ নিয়ে মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় বাবা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও বিচারের দাবি জানান ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।
ভিডিওবার্তায় তিনি জানান, তার বাবা সারা জীবন দেশের জন্য কাজ করেছেন। দেশের পররাষ্ট্র সচিব ও জাতিসংঘের উপমহাসচিব ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৫ সালে বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান তিনি। এরপর ১৬ বছরে তার বাবার হত্যার বিচার নিয়ে হয়েছে প্রহসন।
বাবা হত্যার বিচার এভাবে আর কতদিন চলবে প্রশ্ন রেখে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘তিন বার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তিনটিতেই আমাদের আপত্তি ছিল। কারণ এগুলোতে সঠিক তদন্ত হয়নি।
‘কিন্তু আমাদেরকে জোর করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন মেনে নেয়ার জন্য। এমনকি এক জন সংসদ সদস্য আমার মাকে ধমকও দিয়েছিলেন। বাবার হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি আমার মা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন একটি সুষ্ঠু তদন্ত হবে না, ততদিন বিচার আশা করা যায় না। এই হত্যার রহস্য আমার পরিবার ও দেশের জন্য উদঘাটন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি আশাবাদী এই বাংলার মাটিতেই আমার বাবার বিচার হবে।’
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তৎকালীন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য কিবরিয়া। জনসভা শেষে বের হওয়ার সময় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢাকায় নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা ও স্থানীয় তিন জন নিহত হন। আহত হন আরও ৭০ জন।
এ ঘটনার পরদিন তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান জাতীয় কমিটির সদস্য, সাংসদ অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। মামলার তদন্তে কাজ করেছে দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা।
কিবরিয়া হত্যার বিচার নিয়ে হতাশার কথা জানান মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খানও। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় আমি হতাশ। আশা করি দ্রুতবিচার সম্পন্ন হবে।’
এদিকে কিবরিয়ার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। এসব কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং কিবরিয়া স্মৃতি সংসদ।
এ ছাড়া ঢাকার বনানীতে কিবরিয়ার কবরে সকালে পুস্পস্তবক অর্পণ করে তার পরিবার। পরে সেখানে জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল হয়।