চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট শুরুর ঘণ্টা চারেক পার হলেও খুব একটা দেখা মিলছে না ভোটারদের। তবে কেন্দ্রের বাইরে দলীয় কর্মীদের জটলা। নগরীর অনেক অধিকাংশ কেন্দ্রেই দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র।
সকাল আটটায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। কোনো কোনো কেন্দ্রে ইভিএম জটিলতার কারণে ভোট শুরু হয় দেরিতে। সকালের দিকে ছিল কনকনে ঠান্ডা।
ধারণা করা হচ্ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ভোটার। কিন্তু এখন রোদের দেখা মিললেও, দেখা মিলছে না ভোটারদের।
সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে অধিকাংশতেই নগণ্য ভোটার উপস্থিতিই দেখতে পেয়েছে নিউজবাংলার টিম।
কদম মোবারক মুসলিম এতিম খানা বিদ্যালয় কেন্দ্রে মহিলা ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৮০। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৮টি।
কোথাও কোথাও দেখা গেছে দুপুর পর্যন্ত ভোট গ্রহণের হার ৫-৬ শতাংশের নিচে। তবে এখনও বাকি আছে চার ঘণ্টা। দুপুরের পর ভোটার বাড়ার নমুনাও দেখা যাচ্ছে না।
শহীদনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টিসার্চ ট্রেনিং কলেজ, ঝাউতলা বাজার বঙ্গবন্ধু বাংলা বিদ্যাপিট, ফিরোজ শাহ কলোনী সরকারি বিদ্যালয়সহ অনেক কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
অধিকাংশ কেন্দ্রেই দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি নগণ্য। ছবি: নিউজবাংলাফিরোজ শাহ কলোনী সরকারি বিদ্যালয় এর প্রিজাইডিং অফিসার মাহেন্দ্র চাকমা নিউজবাংলাকে জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ২৫৩। তবে সকাল থেকে মাত্র ১৯৩ টি ভোট পড়েছে।
টিসার্চ ট্রেনিং কলেজের প্রিজাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার তিন হাজার ৪৭৯ জন। তবে ভোট শুরুর দুই ঘণ্টায় মাত্র নয়টি ভোট পড়েছে।
কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে ভোটার উপস্থিতিতেও তা প্রভাব পড়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক থাকলেও সংঘর্ষের সময় তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের অভিযোগ, তাদেরকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না।
নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত এক
ভোট শুরুর ঘণ্টা দুই পর নগরের খুলশী থানার আমবাগান ঝাউতলার ইউসেফ এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতার সময় গুলিতে আলাউদ্দিন আলম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তার মৃত্যু হয়।
খুলশি থানার ওসি (তদন্ত) আফতাব আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আলম নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে আছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।’
কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম চৌধুরীর অনুসারীদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হন আলম। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত আলম ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের কর্মী।
ভোটের সকালে কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংসতাও হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলাধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
ভোটের সকালে লালখান বাজার ও পাহাড়তলি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পৃথক দুটি ঘটনায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। সে সময় মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ও গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী এস কবির মানিকের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় সাত থেকে আট জন আহত হন।
একই সময়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ পাহাড়তলীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নুরুল আমিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমেদের সমর্থকদের হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আহত হন অন্তত সাত জন।
শেষ দেখে ছাড়বেন বিএনপির শাহাদাত
ভোট শুরু হওয়ার দুই ঘন্টা পর সকাল নয়টার দিকে নগরের চকবাজার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভোট দিতে এসে ভোট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
ভোট দিতে এসে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন জানান, কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি জানান, কেন্দ্রগুলো থেকে তার এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। তার ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বাইরে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ। ছোটকাল থেকে ছাত্র রাজনীতি করে এই অবস্থায় উঠে এসেছি। নির্বাচন আমি শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়ব। তাদের নগ্নতা আমি সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব। তারা কত নগ্ন ও নির্মম হতে পারে।
‘তারা কিভাবে মেয়েদের গায়ে হাত দিতে পারে। তারা কিভাবে আমাদের ছেলেদের লাঞ্চিত করতে পারে। কিভাবে এজেন্টদের বের করে দিতে পারে আর কিভাবে প্রার্থীদের গায়ে হাত তুলতে পারে। এটা সারা বিশ্বের জানা উচিত সিটি নির্বাচনে কি কি হচ্ছে।’
‘সুন্দর পরিবেশ, সুষ্ঠু ভোট’
সকাল নয়টার একটু আগে নগরের এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী দাবি করেন, ভোটের পরিবেশ খুব সুন্দর। ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলাতিনি বলেন, ‘পরিবেশটা সুন্দর। মানুষ উৎসবমুখর। একটা নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে।’
জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ জানিয়ে রেজাউল বলেন, ‘ভোটাররা যে রায় দেবেন সেটা আমি মেনে নিব। জয় হলেও মেনে নেব, পরাজয় হলেও মেনে নেব। খেলতে যখন নেমেছি ফলাফল যা হবে, সেটাই মেনে নেব।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির শাহাদাত হোসেন ছাড়াও মেয়র পদে লড়ছেন আরও পাঁচ প্রার্থী।
অন্যদিকে, ৩৯টি সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ২৩৭ জন।
এবারের নির্বাচনে ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন।