১৯ লাখ ভোটারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে ভোট হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ সিটির ভোট নিয়ে আগ্রহ আছে বিভিন্ন মহলের। নির্বাচনি প্রচারের সময় প্রার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যস্ততা।
প্রচার চলাকালে বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, প্রাণহানিও হয়েছে একজনের। তবে মেয়র প্রার্থীর প্রচারে এক দিন ছাড়া বাকি সময় ছিল অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ।
ভোট নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। পরিবেশ ভালো হলে কেন্দ্রে যাওয়ার কথা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন একাধিক ভোটার।
চট্টগ্রামে ভোট শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচনি কর্মকর্তারা। এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ছবি: নিউজবাংলা
তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন শান্তিপূর্ণ ভোটের আশার পাশাপাশি শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন। তার ৮৩ জন কর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ নিয়ে ভোটের প্রচারের শেষ দিন তিনি পার করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগ। ছবি: নিউজবাংলা
রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের জোর দিয়ে বলছেন, ভোট হবে সুষ্ঠু। তবে নির্বাচন কমিশন নিজেই অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র নিয়ে সতর্ক।
সিটি করপোরেশনে ভোট হবে মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
কেন্দ্রের নিরাপত্তা
প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকছে অস্ত্রধারী চার পুলিশ, অস্ত্রধারী দুই আনসার এবং লাঠিসহ ১০ আনসার ও ভিডিপি সদস্য। সব মিলিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হচ্ছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ১৬ সদস্যকে।
১০ জন আনসার ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে আবার চার জন নারী ও ছয় জন পুরুষ । তাদের নেতৃত্ব দেবেন একজন উপপরিদর্শক।
আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে যুক্ত করা হচ্ছে অতিরিক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে। তারাও সঙ্গে অস্ত্র বহন করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন রাখা হলে হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই অনেক বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কেন্দ্রগুলোতে রেখেছি, যাতে ভোটগ্রহণ করতে কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।’
নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও জানতে চাওয়া হয় হাসানুজ্জামানের কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো সিটিকে নিরাপত্তার চাদরে আমরা আবৃত করেছি।
‘আপনারা জানেন যে, আমাদের পুলিশের সাত হাজার ৭৭২ জন ফোর্স নিয়োজিত আছে। আমাদের বিজিবির ২৫ প্লাটুন ফোর্স নিয়োজিত আছে। র্যাবের ৪১টি টিম আছে। এ ছাড়া আমাদের স্ট্রাইকিং ফোর্সও আছে। মোবাইল টিম এবং আনসারের প্রায় তিন হাজার ৮০০ সদস্য এই নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবে।’
ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ভিত্তিতে ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
প্রার্থী ও ভোটার
এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। তবে মূল লড়াই যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হবে, সেটা স্পষ্ট। বাকি পাঁচ প্রার্থী নিয়ে দৃশ্যত আলোচনা নেই ভোটের মাঠে।
প্রার্থীদের পোস্টারে ছেঁয়ে যায় সিটির বিভিন্ন এলাকা। ছবি: নিউজবাংলা
৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১৭২ প্রার্থী। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই আছে বিদ্রোহী। তাই কাউন্সিল পদে জমজমাট লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আর সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭। ভোটের প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন না এই নারী প্রার্থীরাও।
নগরীতে মোট ভোটর সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন।