ভোটার ১৯ লাখ। দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আগের সুযোগ।
ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে গেছে যন্ত্রপাতি। বুধবার সকাল আটটা থেকে খুলবে কেন্দ্র।
প্রচার চলাকালে বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, প্রাণহানিও হয়েছে একজনের। তবে মেয়র প্রার্থীর প্রচারে একদিন ছাড়া বাকি সময় ছিল শান্তিপূর্ণ।
ভোট নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই। ভোটের পরিবেশ ভালো হলে কেন্দ্রে যাবেন, নিউজবাংলাকে বলেছেন একাধিক ভোটার।
গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৬ জানুয়ারি মোট ৮৪টি পৌরসভায় ভোটে অল্প কয়েকটি এলাকা ছাড়া বাকিগুলোতে দেখা গেছে নির্বিঘ্ন ভোট। চট্টগ্রামেও এমনটাই হবে আশাবাদী নির্বাচনি কর্মকর্তারা।
দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও শাহাদাত হোসেন আশা করছেন ভোট হবে শান্তিপূর্ণ, যদিও শাহাদাত কিছুটা শঙ্কিতও। তার ৮৩ জন কর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ নিয়ে ভোটের প্রচারের শেষ দিন তিনি দিনভর ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের জোর দিয়ে বলছেন, ভোট হবে সুষ্ঠু। তবে নির্বাচন কমিশন নিজেই অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র নিয়ে সতর্ক।
সিটি করপোরেশনে ভোট হবে মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী
প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকছে অস্ত্রধারী চার পুলিশ, অস্ত্রধারী দুই আনসার এবং লাঠিসহ ১০ আনসার ও ভিডিপি সদস্য। সব মিলিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হচ্ছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ১৬ সদসকে।
১০ জন আনসার ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে আবার চার জন নারী এবং ছয় জন পুরুষ সদস্য থাকবেন। তাদের নেতৃত্ব দেবেন একজন সাব ইন্সপেক্টর।
আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে যুক্ত করা হচ্ছে অতিরিক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে। যারাও তাদের সঙ্গে অস্ত্রবহন করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি জানান, ‘আমরা আগে থেকেই অনেক বেশি সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কেন্দ্রগুলোতে রেখেছি। যাতে ভোটগ্রহণ করতে কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।’
নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও জানতে চাওয়া হয় হাসানুজ্জামানের কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো সিটিকে নিরাপত্তার চাদরে আমরা আবৃত করেছি।
বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগ
‘আপনারা জানেন যে, আমাদের পুলিশের সাত হাজার ৭৭২জন ফোর্স নিয়োজিত আছে। আমাদের বিজিবির ২৫ প্লাটুন ফোর্স নিয়োজিত আছে। র্যাবের ৪১টি টিম আছে। এছাড়াও আমাদের স্টাইকিং ফোর্স আছে, মোবাইল টিম এবং আনসারের প্রায় তিন হাজার ৮০০ সদস্য এই নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবে।’
ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ভিত্তিতে মোট ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে বলেও আশাবাদী রির্টার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি আমরা নগরবাসীকে এবং সিটির সম্মানিত ভোটারদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই আগামীকালকে তারা একেবারেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে এবং ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। এবং তারা বাসায় ফিরে আসতে পারবে। আমরা সেই ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছি।’
এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তবে মূল লড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হবে, সেটা স্পষ্ট। বাকি পাঁচ প্রার্থী নিয়ে কোনো আলোচনা নেই ভোটের মাঠে।
ভোটের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম নগরী
৪১ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১৭২ প্রার্থী। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই আছে বিদ্রোহী প্রার্থী। তাই কাউন্সিলের জমজমাট লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আর সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭। ভোটের প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন না এই নারী প্রার্থীরাও।
নগরীতে মোট ভোটর সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন।